E-Paper

প্রতিদ্বন্দ্বী

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করে এলেও, সীমান্তে চাপ বজায় রেখেছে বেজিং। নিয়ন্ত্রণরেখার বহু স্থানেই এখনও সংঘাতে মুখোমুখি ভারতীয় এবং চিন সেনা।

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ০৫:৩১

হাত বাড়ালেই কি বন্ধু মেলে? ২০২০ সালে গলওয়ান সামরিক সংঘর্ষের পরে ভারত-চিন সম্পর্কে যে তিক্ততা জন্মেছিল, তা প্রশমিত করতেই সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাঁচ বছরের কূটনৈতিক স্থবিরতার পরে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করা ছাড়াও সরাসরি বিমান চলাচল এবং ভিসা বিধিনিষেধ শিথিল করার ভাবনা ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিয়দংশ উন্নতিরই ইঙ্গিতবাহী। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দুই দেশের সম্পর্ককে একটি অর্থবহ স্তরে নিয়ে যাওয়ার উপরে জোর দেন— প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর শান্তি স্থাপন। অন্য দিকে, শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও) বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে তিনি পহেলগাম-হামলাকে গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানগত মূল্যবোধের পরীক্ষা হিসাবে উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী সদস্যদের একজোট হওয়ার ডাক দেন। লক্ষণীয়, বেজিং-এর প্রতি তাঁর বার্তা ছিল স্পষ্টতই সহযোগিতামূলক— দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠন, পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ এবং কোনও প্রকার প্রতিযোগিতাকে সংঘাতে পরিণত হতে দেওয়া থেকে বিরত থাকা, এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অথচ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আজও মূলত প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকেই যে দেখে আসছে বেজিং, বিবিধ পদক্ষেপে তা স্পষ্ট। যেমন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করে এলেও, সীমান্তে চাপ বজায় রেখেছে বেজিং। নিয়ন্ত্রণরেখার বহু স্থানেই এখনও সংঘাতে মুখোমুখি ভারতীয় এবং চিন সেনা। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের উত্থান রোধে সীমান্ত বিবাদকে এখনও একটি মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করছে বেজিং। ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও সমর্থন দিচ্ছে তারা। গত এপ্রিলে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা থেকে ইসলামাবাদকে বাঁচিয়ে এসেছে বেজিং। করেছে সামরিক ও অর্থসাহায্যও। একই ভাবে, ভারতের কাছে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলিকে প্রভাবাধীন করার পদক্ষেপও করছে তারা। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ বাংলাদেশ। অন্য দিকে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং বিরল খনিজের প্রক্রিয়াকরণে বিশ্বে প্রায় সবার থেকে এগিয়ে চিন। এমতাবস্থায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের জেরে চিনের বিরল পদার্থের রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা বিপদে ফেলেছে ভারতকেও। তাঁর সফরকালে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী বিষয়টি চিনের কাছে উত্থাপন করলেও, এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি বেজিং।

তাই বলা যেতে পারে, ভারত-চিন সম্পর্ক আজ আর দ্বিপাক্ষিক নেই— ভিন্ন বিশ্বদৃষ্টিসম্পন্ন দুই রাষ্ট্রের এক গভীর কাঠামোগত প্রতিযোগিতার প্রতীক, যেখানে ভারতকে ‘দমিয়ে’ রাখতে অর্থনীতির পাশাপাশি তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবও খাটাচ্ছে চিন। এমতাবস্থায়, সীমান্ত বিরোধ ও বাণিজ্যিক নির্ভরতা— উভয়ই মোকাবিলা করতে দিল্লি যথাযোগ্য নীতি উদ্ভাবন করতে না পারলে, ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও ক্ষমতার ভারসাম্যে চিন তার আধিপত্য বিস্তার করতেই থাকবে। ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর ‘কণ্ঠ’ হওয়ার প্রচেষ্টারত দিল্লির ক্ষেত্রে যা মোটেই সুখকর নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-China Pakistan Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy