E-Paper

ভোটের তাড়া

পরবর্তী উদাহরণ হতে চলেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন। ইতিমধ্যে তাঁরা সোজাসুজি বলে দিয়েছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলেও তার আওতা থেকে জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে বাদ রাখা হবে।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:২৭
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অমিত শাহ।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিশেষ কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন: বিজেপি, আরএসএস ও সমগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অনেক প্রচ্ছন্নতা, পরোক্ষতা— এবং ছলনা— সরিয়ে রেখে তাঁরা নিজেদের কর্মসূচিটি স্পষ্ট ও নির্দ্বিধ ভাবে বলে দিতে পারেন। রামমন্দির নির্মাণ এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ এর দু’টি উদাহরণ। পরবর্তী উদাহরণ হতে চলেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন। ইতিমধ্যে তাঁরা সোজাসুজি বলে দিয়েছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলেও তার আওতা থেকে জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে বাদ রাখা হবে। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ বিষয়ে বিজেপি নেতারা ইতিউতি মন্তব্য করেছেন। ইতিমধ্যে উত্তরাখণ্ডে ভারতের মধ্যে প্রথম এই বিধি কার্যকর হলে সেখানে জনজাতিদের বাদ রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, উত্তরাখণ্ডের দৃষ্টান্তই হাতে-গরম প্রমাণ— অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কখনওই দেশের ‘ট্রাইবাল’ জনসমাজের জন্য প্রযোজ্য নয়: তাঁরা নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পারেন।

নতুন কথা নয়। জনসঙ্ঘের সময় থেকেই বোঝা গিয়েছে যে, ভারতে এক ও অভিন্ন আইনের প্রয়োজনীয়তা হিন্দুত্ববাদীরা প্রচার করে থাকেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর কথা— আরও স্পষ্ট করে বললে, মুসলিম পার্সোনাল ল বা শরিয়তি আইনের কথা— মাথায় রেখেই। এই আইন দিয়ে জনজাতি গোষ্ঠীগুলিকে এক আইনের ছাতার তলায় আনার কথা তাঁরা ভাবেন না, কেননা তাতে হিন্দু সমাজের মধ্যে বহুধাবিচ্ছিন্নতার বিষয়টি এক অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ, দেশীয় সমাজের বহু প্রান্তিক সমাজ এর ফলে উচ্চবর্ণভুক্ত হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাবলয়ের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। দশ বছরের মোদী-রাজত্বের পর এখন বিজেপির বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণত্বের অভিযোগটি বিভিন্ন প্রান্তিক সমাজের মধ্যে আরও পোক্ত হয়েছে: গত জাতীয় নির্বাচনে তা টেরও পাওয়া গিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের প্রচারে এসে সেই কারণে অমিত শাহ এক দিকে অনুপ্রবেশকারী সংখ্যালঘুদের বহিষ্কারের প্রসঙ্গের সঙ্গে প্রায় এক নিঃশ্বাসেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থেকে জনজাতিকে বাইরে রাখার প্রতিশ্রুতিটি দিয়েছেন, কেননা দু’টিরই ভিত্তি আসলে একই— সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধের ভাবনা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অরুণাচল প্রদেশের জনজাতিদের লক্ষ্য করে বলেছেন একই কথা যে, ‘সংবিধান অনুসারে’ অভিন্ন বিধি এলেও ট্রাইবাল অঞ্চলগুলিতে তাদের নিজস্ব আইনবিধি প্রযোজ্য থাকবে। এই যুক্তিক্রম কিছুটা আশ্চর্য করে বইকি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি দরকার কি না, সেটি একটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু সংবিধান অনুসারে জনজাতি সম্প্রদায় যদি আলাদা ব্যবস্থায় চলতে পারে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কেন তা পারে না, এই ধাঁধাটি থেকেই যায়। রিজিজুরা সম্ভবত উত্তর দেবেন, সংবিধানে ‘এস-টি’ হিসাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা উল্লিখিত নেই বলেই এই ছাড় সংখ্যালঘুরা পেতে পারে না। বিজেপি-বিরোধী দলগুলি একে বলেছে জনজাতি-তোষণের রাজনীতি, ভোটব্যাঙ্ক-রাজনীতি। কিন্তু এ সব রাজনৈতিক কোন্দলের কথা ছেড়ে দিলেও, যুক্তির দায়টি বিজেপি নেতারা এড়িয়ে যেতে পারেন না। সংবিধানে আছে সংখ্যালঘুদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করার কথাও, তার সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা বিষয়ে তাঁরা কী বলেন? বৃহত্তর প্রশ্নটি হল, কেন এত তাড়াহুড়ো। অভিন্ন বিধির প্রচলনের প্রয়োজন থাকলেও ভোটবৃক্ষের ফলের দিকে তাকিয়ে সে কাজ করা যায় না। ২১তম আইন কমিশন মাত্র পাঁচ বছর আগেই জানিয়েছিল, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এই সময়ে ‘আবশ্যিকও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়’। পাঁচ বছরের মধ্যে সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে নোটিফিকেশন জারি করা হচ্ছে কেবল বিজেপির ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Narendra Modi Amit Shah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy