E-Paper

সীমান্ত এবং সঙ্কট

কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুর-মায়ানমার সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া বসালেও, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত নিজের ঘরের সমস্যার আশু সমাধান খুঁজতে হবে ভারতকে।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৪:৫৪
Manipur Violence

মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল অন্ধকারাচ্ছন্ন, অধিকাংশ ঘরবাড়ি জনমানবহীন। ছবি: পিটিআই।

গত ফেব্রুয়ারিতেই মণিপুরের ইম্ফলে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি২০’র বাণিজ্যিক সম্মেলন (বি২০), যেখানে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিকে চিত্রিত করা হয়েছিল সমৃদ্ধশালী, বাণিজ্যমনস্ক ভারতের এক অঙ্গ হিসাবে। আজ সেখানকার চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। রাজধানী ইম্ফল অন্ধকারাচ্ছন্ন, অধিকাংশ ঘরবাড়ি জনমানবহীন, প্রতিনিয়ত টহল দিচ্ছে সেনা। মে-র গোড়া থেকে শুরু হওয়া জাতি-দাঙ্গার আগুন এখনও স্তিমিত হয়নি মণিপুরে। উপযুক্ত পদক্ষেপের অভাবে মেইতেই এবং কুকিদের বিবাদ মিটমাটেরও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে, পাহাড়ি রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক অশান্তিতে আন্তর্জাতিক প্রভাবের প্রসঙ্গটিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে প্রায় সাড়ে ষোলোশো কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে মায়ানমারের, যার মধ্যে প্রায় চারশো কিলোমিটার মণিপুরের সঙ্গে। সমস্যা হল, মায়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি এমনিতেই অস্থির ছিল। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মণিপুর লাগোয়া সে দেশের দুই প্রদেশের গণতন্ত্রকামী বাহিনীর লড়াই চলছে, যা ২০২১ সালের পর থেকে তীব্রতর হয়েছে। যুদ্ধের জেরে গত দু’বছরে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে অসংখ্য শরণার্থী ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করছেন, যাঁদের সঙ্গে মণিপুর এবং মিজ়োরামের জনজাতি সমাজের জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে।

কোনও আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিধির স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় কয়েক বছর আগে মায়ানমারের রাখাইন থেকে আগত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের ভারত ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে হেনস্থা করতে পেরেছে। নতুন শরণার্থীদের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা করা মুশকিল। কেননা সেখানে রয়েছে দুই দেশের মানুষের মধ্যে একই জনজাতি-পরিচিতির বন্ধন। এমনিতেই মেইতেই এবং জনজাতি মানুষদের মধ্যে সংঘাতের প্রধান কারণ জমি। রাজ্যের নব্বই শতাংশ পাহাড়ি জমিতেই জনজাতি গোষ্ঠীর বাস। বাকি দশ শতাংশ ইম্ফল উপত্যকায় মূলত রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা থাকেন। অভিযোগ উঠেছে, নতুন শরণার্থীদের জন্য অরণ্যে নতুন জনবসতি গড়ে তুলছেন জনজাতি কুকিরা। এর ফলে আগামী দিনে তাঁদের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেইতেইরা। শুধু তা-ই নয়, এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের মাদক চক্রগুলিকে কাঁচামাল জোগানেরও অভিযোগ রয়েছে। ফলে, বিবিধ জনজাতির মধ্যে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদল এবং সম্পদ বণ্টনের জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটি।

বেআইনি অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার এবং সীমান্তবর্তী অপরাধ রোধে কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুর-মায়ানমার সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া বসালেও, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত নিজের ঘরের সমস্যার আশু সমাধান খুঁজতে হবে ভারতকে। পূর্বে জুন্টা সরকারের কাজকর্মে নীরব দর্শক থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা উচিত দিল্লির। প্রসঙ্গত, সে দেশে জনসাধারণের একটি বড় অংশ এখনও গণতন্ত্রের পক্ষে। ফলে, তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশেষ সমর্থক। এমতাবস্থায় নিজেদের কূটনৈতিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে জুন্টা সরকারের সঙ্গে সঙ্কট মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে ভারতকে। মণিপুরে অশান্তির আগুন নেবাতে এ ছাড়া গত্যন্তর নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Manipur Violence Ministry of Home Affairs

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy