Advertisement
E-Paper

বৈধতার ফাঁদ

রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি কী ভাবে কয়লা মন্ত্রকের কাছে উত্থাপন করবেন জানা নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশটি আশার চাইতে উদ্বেগ জাগায় বেশি।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৬:১৬
An image of Coal Mine

এমন খনি থেকে কয়লা চুরি করেন এলাকার বহু মানুষ। প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের অবৈধ কয়লা খনিকে বৈধ করা যায় কী করে, তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, এতে কর্মসংস্থান হবে, আর রাজস্বও মিলবে। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি কী ভাবে কয়লা মন্ত্রকের কাছে উত্থাপন করবেন, জানা নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশটি আশার চাইতে উদ্বেগ জাগায় বেশি। কাজ সৃষ্টি রাজ্য সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু কর্মক্ষেত্রটি বিধিসম্মত এবং নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করা সরকারের একেবারে প্রাথমিক কর্তব্য। অভিজ্ঞতা বলে যে, এ রাজ্যে অবৈধ কয়লা খনিগুলি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অতীব ঝুঁকিপূর্ণ, পরিবেশ দূষণকারী এবং মাফিয়া চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলিকে বৈধ করা কি আদৌ অভিপ্রেত? বেআইনি কয়লা উত্তোলন হয় প্রধানত দু’ভাবে। এক, ভূগর্ভ থেকে আগে কয়লা উত্তোলন হত, বর্তমানে ইসিএল ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করেছে, এমন খনি থেকে কয়লা চুরি করেন এলাকার বহু মানুষ। ধস নিবারণ করতে ইসিএল কয়লার যে স্তম্ভগুলি রেখে দিয়েছে, সেগুলি কেটে এঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করেন, খনির উপর জমির আস্তরণকে আরও ধসপ্রবণ করে গোটা এলাকাকে বিপন্ন করেন। এই পরিত্যক্ত খনিগুলি বৈধ করা সম্ভব নয়, উচিতও নয়। অপর পদ্ধতিটিও কয়লা কেলেঙ্কারির সুবাদে এখন পরিচিত— অবৈধ কারবারিরা কর্তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে খোলা মুখ (ওপেন কাস্ট) খনির একটা অংশের ‘ইজারা’ নিয়ে বেলাগাম ভাবে কয়লা উত্তোলন করে। অনেকে পরিকল্পনা-বহির্ভূত স্থান থেকেও কয়লা উত্তোলন করে। গত বছর ইসিএল-এর নানা স্তরের কর্মী-আধিকারিকরা সিবিআই-এর জালে ধরা পড়েছেন কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে। এই অবৈধ উত্তোলনকেই বা বৈধ করা যায় কী করে, রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের কাছে এই প্রশ্নের কোনও নৈতিকতাসিদ্ধ উত্তর আছে কি?

খোলা মুখ খনির জমির পরিসর কতখানি, তা থেকে কতটা কয়লা তোলা সম্ভব, এ সবই নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের অধীন ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব মাইনস সেফটি’। কোন এলাকায় কত পরিমাণ কয়লা উত্তোলন নিরাপদ, সে বিষয়ে যথাযোগ্য বিবেচনার পরেই তারা ছাড়পত্র দেয়। তার পরে নতুন করে কয়লা উত্তোলনের উপযোগী এলাকা, বা উপযুক্ত পরিমাণ নিয়ে দরদস্তুর করা রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। কয়লা খনি পশ্চিমবঙ্গে হলেও, রাজ্য সরকারের কোনও আইনি অধিকার নেই কয়লার উপরে। কোল ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত ছাড়া কোনও খননকার্যকে ‘বৈধ’ বলে ঘোষণা করা যায় না। কয়লা মন্ত্রকের কাছে রাজ্য সরকার প্রস্তাব অবশ্যই পেশ করতে পারে, কিন্তু কেনই বা তা করবে? অবৈধ কারবারকে বৈধতা দিলে ঘুরপথে মাফিয়া সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না কি? আইনের শাসন প্রয়োগ করতে যেখানে রাজ্য ব্যর্থ, সেখানে আইন বদলে দিলেই ঝামেলা চুকে যায়— এ কেমন সমাধান? রাজ্যবাসীর কাছে এ এক ভয়ানক বার্তা বহন করে।

বেকারত্বের জ্বালা রাজ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কাজের চাহিদার অজুহাতে যে কোনও অবৈধ কারবারকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা একটি রাজনৈতিক অপকৌশল। অবৈধ বাজি কারখানার মতো বিপজ্জনক শিল্পকেও ঘুরপথে বৈধতা দিতে চাইছে রাজ্য বেকারত্বের জুজু দেখিয়ে। মনে রাখতে হবে, আধুনিক কয়লা উত্তোলন একান্তই যন্ত্রনির্ভর, অদক্ষ শ্রমিকের নিয়োগের সম্ভাবনা সেখানে সামান্যই। রাজ্য সরকার বরং স্বচ্ছ ও পরিবেশ-বান্ধব ‘সবুজ শক্তি’ উৎপাদনের উদ্যোগ করতে পারে, যা কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে রাজ্যবাসীর লাভ বেশি। সব অর্থেই যে কাজ বিপজ্জনক, তাকে বৈধ করা অনর্থক।

Coal Mine Illegal Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy