E-Paper

করাল ছায়া

সমীক্ষা দেখিয়েছে, দেশের একাংশে ক্যানসার প্রকট খাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং নব্যপ্রজন্ম তৈলাক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, বসে বসে কাজের দরুন রোগের কবলে পড়ছে। মহিলাদের মধ্যে কয়েক ধরনের ক্যানসার লক্ষণীয়, যা গোড়ায় ধরা গেলে সুস্থতা সম্ভব।

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:২৯

দেশে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে ক্যানসারের বিপদ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশে রোগাক্রান্ত ছিলেন ১৩.৫ লক্ষ, ২০২০-তে ১৩.৯ লক্ষ, ২০২১-এ ১৪.২ লক্ষ এবং ২০২৪-এ ১৫.৩ লক্ষ। বাড়ছে মৃত্যুও। ২০১৯-এ ৭.৫ লক্ষ এবং ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২-এ যথাক্রমে ৭.৭ লক্ষ, ৭.৮ লক্ষ এবং ৮ লক্ষেরও বেশি মৃত্যু নথিবদ্ধ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের মন্ত্রীর মূল্যায়ন, গড় আয়ু বাড়ায় বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি, রোগ শনাক্তকরণের সুবিধার সহজলভ্যতা ও পূর্বের তুলনায় মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে পরীক্ষা করানোর প্রবণতা বেড়েছে, ফলে পরিসংখ্যান বাড়ছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বিষয়টিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

গবেষণা দেখিয়েছে, দেশে ৭০% রোগীই রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ, রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব একটি বড় সমস্যা। রোগটির জটিল গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল থেকে সময়ে রোগ নির্ধারণ করে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা শুরুর অন্তরায় হল দেশ জুড়ে অত্যন্ত অপ্রতুল পরিকাঠামো, করুণতম চিত্র গ্রামাঞ্চলে। অতএব, অসংক্রামক রোগ সম্পর্কীয় জাতীয় প্রকল্পের আওতায় হৃদ্‌রোগ, ডায়াবিটিস, স্ট্রোকের মতো রোগের সঙ্গে একত্র করে আর নয়, ক্যানসার মোকাবিলায় দেশ জুড়ে স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা জরুরি। রোজের খাবারে, চটজলদির মুখরোচকে, ক্যানসার উৎপন্নকারী রং, রাসায়নিক, উপাদান রয়েছে কি না, তেল স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, জানতে বারে বারে অভিযান চালাতে হবে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা রাসায়নিক, গ্যাসীয় নিঃসরণের ফলে পরিবেশে ক্যানসার সৃষ্টিকারী দূষিত পদার্থ বাড়লে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। মাইক্রোপ্লাস্টিক ও জলবায়ু দূষণজাত বিষ অপসরণে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব থাকা দরকার। সমীক্ষা দেখিয়েছে, দেশের একাংশে ক্যানসার প্রকট খাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং নব্যপ্রজন্ম তৈলাক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, বসে বসে কাজের দরুন রোগের কবলে পড়ছে। মহিলাদের মধ্যে কয়েক ধরনের ক্যানসার লক্ষণীয়, যা গোড়ায় ধরা গেলে সুস্থতা সম্ভব। ফলে, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং জীবনশৈলী নিয়ে সচেতনতা প্রচারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।

যেমন, তামাকজাত পণ্যে কর বাড়ানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি ফুসফুস ও মুখগহ্বরের ক্যানসার প্রতিরোধে ইতিবাচক হতে পারে। এই ধরনের যত সামগ্রী রোগের প্রত্যক্ষ কারণ, সেগুলিতে বিপুল কর ও সতর্কবার্তা আকর্ষণ প্রতিহত করবে, সরকারি কোষাগারের পক্ষে লাভজনকও হবে। এই অর্থ ক্যানসার চিকিৎসায় সহায় হবে। দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকায় কর্কট রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯০%, ভারতে তা মাত্র ৬০%। কারণ, ক্যানসারের ওষুধ, চিকিৎসা প্রক্রিয়ার উচ্চমূল্য। উন্নয়নশীল দেশটিতে কর্কটযুদ্ধকালে সচ্ছল ব্যক্তিও অকূল পাথারে পড়েন। মধ্য ও নিম্ন আয়বর্গে মৃত্যুর প্রতীক্ষা ছাড়া উপায় থাকে না। স্বেচ্ছাসেবনে উচ্চকর আদায় ছাড়া বিশেষ বিমায় ভর্তুকির ব্যবস্থা এনে, জেলাস্তরে হাসপাতাল সংখ্যা বাড়িয়ে বিনামূল্যের চিকিৎসাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে সরকারকে। ভরসা দিতে হবে যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বা চিকিৎসার কারণে সর্বস্বান্ত হওয়ার পরিস্থিতি অন্তত ঘটবে না। ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শক্তি ও পরিধি বাড়াতেই হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Disease Medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy