দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। অবশেষে প্রকাশিত হল ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা (ডব্লিউবিজেইই)-র ফল। স্বাভাবিক ভাবেই এ বারের বেনজির বিলম্বে চরম উৎকণ্ঠায় ছিলেন রাজ্যের লক্ষাধিক পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা। বিলম্বের অন্যতম কারণ— আদালতের আদেশে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে সরকারি নির্দেশনামা বাতিল হওয়া। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই সংরক্ষণের সংশোধিত নিয়ম জারি হয়েছে। জয়েন্ট সংক্রান্ত জটিলতার সূত্রপাত গত বছর, যখন উচ্চ আদালত পদ্ধতিগত ত্রুটি উল্লেখ করে সংরক্ষণের তালিকা বাতিল করেছিল। এমতাবস্থায়, বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত ছিল এ বারের শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার অনেক আগেই। কিন্তু তখন টনক নড়েনি তাদের। এখন এত দেরিতে তারা নড়চড়ে বসায় গোটা ভর্তি প্রক্রিয়াটাই পড়েছিল ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে। এ দিকে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স ল্যাটারাল এন্ট্রি টেস্ট (জেইএলইটি)-এর মতো রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের নেওয়া অন্যান্য পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে এখনও। অনুমান, ওই আইনি জটিলতা ও সরকারি গড়িমসির জেরেই এ ক্ষেত্রেও হচ্ছে বিলম্ব।
অথচ, গত বছর এপ্রিলের শেষে জয়েন্ট পরীক্ষা হওয়ার পরে জুনের গোড়াতেই প্রকাশিত হয়েছিল ফল। ক্লাসও শুরু হয় ঠিক সময়ে। লক্ষণীয়, জয়েন্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে থাকে এঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির বহু রাউন্ডের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। ফলে, এখন ফল প্রকাশিত হলেও কোর্সগুলির বহু রাউন্ডের কাউন্সেলিং এবং ভর্তি শেষ করে ক্লাস শুরু করতে পুজোর ছুটি এসে পড়বে। সে ক্ষেত্রে কোর্সের শুরুতেই জাতীয় স্তরের শিক্ষাসূচির তুলনায় বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়বে রাজ্যের পড়ুয়ারা। এই অপ্রত্যাশিত অনিশ্চয়তার আবহে রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উচ্চ ও মধ্য মেধার পড়ুয়াদের সিংহভাগ চলে গিয়েছে ভিন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে। কিংবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোটা টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি এঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। এ বার জয়েন্টের ফল বেরোলেও এত অর্থব্যয়ের পরে তারা আর জয়েন্টের আসনের বিষয়ে আগ্রহী হবে কি? সে ক্ষেত্রে ফাঁকা আসনের সংখ্যা বাড়বে সরকারি এঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির। অন্য দিকে, জয়েন্টের ফলপ্রকাশের অপেক্ষায় আর্থিক ভাবে অসচ্ছল যে ছেলেমেয়েরা থেকে গিয়েছে রাজ্যে, তারা ভর্তি হয়ে থাকছিল সাধারণ স্নাতক কোর্সে। এদের মধ্যে সফল পড়ুয়ারা এঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে চলে গেলে, স্নাতক স্তরের আসনও খালি থেকে যাবে।
তাতে আখেরে রাজ্যেরই ক্ষতি। ভুললে চলবে না, যাদবপুরের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের একটি আসনের পিছনে সরকারের বার্ষিক খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এমতাবস্থায় রাজ্যে সরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ২০ শতাংশেরও বেশি এঞ্জিনিয়ারিংয়ের আসন খালি থাকলে সেই ক্ষতির পরিমাণ কোথায় দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। সরকারি স্তরে ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনার খামতির জেরে আজ রাজ্যের লক্ষ লক্ষ পড়ুয়াকে এমন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অনেক আগে তৎপর হওয়ার প্রয়োজন ছিল রাজ্য সরকারের। বিশাল সংখ্যক— প্রধানত দরিদ্র— পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ যেখানে জড়িয়ে, সেখানে আর একটু সুপরিকল্পনা করা এতই কি কঠিন?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)