E-Paper

কর্তা ও কর্ম

এআই না হয় আর একটু ‘মানুষ’ হল, কিন্তু মানুষের এ বার করণীয় কী? ‘এআই সব করে দিচ্ছে’, বিশ্বব্যাপী এই সার্বিক ধারণা ও আশঙ্কা কি তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ছায়া ফেলবে?

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:৫৬

এআই আধুনিক জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী করতে পারে, রোজ তার কিছু না কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সেই ধারাতেই সম্প্রতি দেখা গেল অভিনব ঘটনা, একটি এআই ইমেজ-জেনারেশন টুল হাতে-লেখা অঙ্কের প্রশ্ন দেখে সেই অঙ্কটা তৎক্ষণাৎ কষে দিল তো বটেই, গোটা কাজটা সমাধা করল ওই হাতের লেখার অবিকল নকল করেই! গুগল সংস্থার তৈরি ‘ন্যানো বানানা প্রো’ এআই টুলের এই ‘কীর্তি’ সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন এক ব্যক্তি, তিনিই হাতে-লেখা অঙ্কটার ছবি এআই-কে দেখিয়েছিলেন। এআই-এর অঙ্ক কষা যে খুব কঠিন কাজ নয়— ঝাপসা ছবি স্পষ্ট করে তোলা, একটা গোটা বই পড়ে চটজলদি তার সারাংশ চোখের সামনে হাজির করা, চাকরিদাতার মন ভোলাবে এমন দুর্দান্ত পরিচিতিসার লিখে দেওয়া, এই সব কিছুর মতোই সহজ ও কেজো। তবে মানুষের হস্তাক্ষরেই অঙ্ক কষে দেওয়া মানে অভিনবত্বের চেয়েও আরও বেশি কিছু: ‘মানবোচিত’ হয়ে ওঠার পথে তা আর এক ধাপ এগোনো।

এআই না হয় আর একটু ‘মানুষ’ হল, কিন্তু মানুষের এ বার করণীয় কী? ‘এআই সব করে দিচ্ছে’, বিশ্বব্যাপী এই সার্বিক ধারণা ও আশঙ্কা কি তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ছায়া ফেলবে? মাস্টারমশাই অঙ্ক কষতে দিলে শিক্ষার্থীরা কি নিজেরা না কষে, এআই দিয়েই তা করিয়ে নেবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে এরই মধ্যে নানা কথা উঠছে— বাড়িতে করতে দেওয়া কাজ, প্রোজেক্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট বহু শিক্ষার্থীই এআই দিয়ে করিয়ে হাজির করছে শিক্ষকের সামনে, নিজের হাতে করছে না। অভিজ্ঞ শিক্ষকের চোখে তা অবশ্য ধরা পড়তে বাধ্য, শিক্ষার্থীকে প্রতিপ্রশ্ন করলেও ঝুলি থেকে এআই-বেড়াল বেরিয়ে পড়ার সম্ভাবনা— তবে কিনা, শিক্ষার্থীর হাতের লেখার অবিকল নকলও যদি এ বার এআই দিয়ে করিয়ে নেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকের কাজ হয়ে উঠবে আরও কঠিন। শিক্ষার্থীরা আর কিছুই নিজে থেকে করবে না; এআই-কে হাতের লেখার নমুনা দিয়ে দিলেই হল, ছাত্র না এআই কে হোমওয়ার্ক করেছে, বোঝা মুশকিল হবে— এই শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে এরই মধ্যে। শিক্ষকেরা বলছেন, হোমওয়ার্ক বা প্রোজেক্টের আসল লক্ষ্য যেখানে ছাত্রটি বিষয় বা পড়াশোনার গভীরে ঢুকেছে কি না তার মূল্যায়ন, সে সব সরিয়ে রেখে তাঁদের হয়তো অনেকটা বেশি সময় কাটাতে হবে কেবলই এক অস্বস্তিকর সন্দেহকে সঙ্গী করে— শিক্ষার্থীর ‘সততা’ যাচাইয়ে।

কেউ বলতে পারেন, এমন যে সবাই করবে তা না-ও হতে পারে। এআই-কে দিয়ে গোড়ার কাজও করিয়ে নিলে যে নিজেদের কিছুই শেখা হবে না, ছাত্ররা কি তা বুঝবে না? তা বলে এআই থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া, বা শিক্ষাক্ষেত্র থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো সিদ্ধান্ত হবে পিছিয়ে পড়ার শামিল। প্রতিটি নতুন প্রযুক্তিরই রয়েছে ভাল-মন্দ, তফাত প্রয়োগের। মানুষ নিজ প্রয়োজনে এআই-কে জীবনে এনেছে; তার সদ্ব্যবহার বা অপব্যবহারের নিয়ামক মানুষই। যে এআই দিয়ে অবিকল মানব-হস্তাক্ষরের অনুকৃতি সম্ভব হচ্ছে তার কাজটি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে, মানুষের হাতে অপব্যবহারের দোষে তাকে দুষ্ট করা চলে না। এ যেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-য় শ্রীরামকৃষ্ণের বলা সেই উপমার মতো: প্রদীপের সামনে কেউ ভাগবত পড়ছে, কেউ বা জাল করছে, প্রদীপ কিন্তু নির্লিপ্ত। তাকে দোষ দেওয়া চলে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

AI Education

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy