Advertisement
E-Paper

সূক্ষ্ম বিচার

গত সপ্তাহে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে বলেছে, ইউটিউব-সহ অন্যান্য চ্যানেল ও পডকাস্টিং প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে যাতে অশালীনতা না ছড়ায়, সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতে।

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৬:০৭
Share
Save

কাকে বলব বাক্‌স্বাধীনতা, রণবীর ইলাহাবাদিয়া মামলার সূত্রে সেই বিতর্ক সম্প্রতি আরও এক বার উঠে এসেছিল সুপ্রিম কোর্টে। একই সঙ্গে কথা উঠেছিল বাক্‌স্বাধীনতার সীমারেখা কত দূর— সমাজরীতি অনুযায়ী সৌজন্য, শিষ্টতা ও শালীনতার যে সংজ্ঞা ও মাত্রা, তার সঙ্গে বাক্‌স্বাধীনতার সম্পর্কটি কী রকম, সেই নিয়েও। তারই সূত্র ধরে এ বার গত সপ্তাহে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে বলেছে, ইউটিউব-সহ অন্যান্য চ্যানেল ও পডকাস্টিং প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে যাতে অশালীনতা না ছড়ায়, সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করতে। কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের অর্থ সচরাচর সংসদীয় প্রক্রিয়ায় বা বিচারব্যবস্থার সাহায্য নিয়ে এই সংক্রান্ত ‘নির্দেশিকা’ জারি করা, যে নির্দেশিকা নাগরিক মানতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু তত্ত্বগত ভাবে এ ধরনের নির্দেশিকা ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত বাক্‌স্বাধীনতার পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে। সেই কারণেই শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে বলেছে সতর্ক থাকতে, যেন তার অশালীনতা দূরীকরণের পদক্ষেপ উল্টে ‘সেন্সরশিপ’-এর নামান্তর হয়ে না দাঁড়ায়।

সাধারণ ভাবে দেখলে মনে হতে পারে এ তো আসলে এক প্রকার স্ববিরোধ— এক দিকে বলা হচ্ছে অশালীনতায় বাঁধ দিতে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে, অন্য দিকে আবার তাকে সতর্ক থাকতেও বলা হচ্ছে, তার জেরে যেন বাক্‌স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ না হয়। আসলে এই দুইয়ের সীমারেখাটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম; একটু এ দিক-ও দিক হলেই তা হয়ে দাঁড়াতে পারে সমাজরীতির অমর্যাদার, সহনাগরিকের ভাবাবেগে আঘাতের শামিল— এমনকি আইনভঙ্গেরও। এই স্পর্শকাতর জায়গাটিই সমাজে বারংবার তর্কবিতর্কের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বাক্‌স্বাধীনতার নামে কত দূর অবধি যাওয়া যেতে পারে সেই সীমারেখাটি কে বলে দেবে, বা আদৌ কেউ বলে দিতে পারে কি না, তাতে বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব হওয়ারই সমূহ সম্ভাবনা থাকে কি না— প্রশ্ন অনেক, তার স্তরও নানা। মনে রাখা দরকার, ভারতের সংবিধান যেমন রাষ্ট্রকে বলেছে নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে, তেমনই উল্লেখ করেছে ‘রিজ়নেবল রেস্ট্রিকশনস’-এর কথাও: বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘নির্বিকল্প’ বটে, তবে তা ‘নিঃশর্ত’ নয়— আমার বলা কথা অন্যের কোনও রকম ক্ষতির কারণ হবে না, এই মানবিক ও যৌক্তিক শর্তটি বাক্‌স্বাধীনতার প্রথম ও শেষ কথা।

মনে রাখা দরকার, শীর্ষ আদালত যে কেন্দ্রকে পদক্ষেপ করতে বলেছে, তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি মাথায় রেখে। যে ঘটনার সূত্র ধরে এত কিছু, সেটিও ঘটেছিল একটি ডিজিটাল পরিসরে, এবং একুশ শতকের ডিজিটাল প্রযুক্তিধন্য ও আন্তর্জাল-নির্ভর ভারতে এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ এমনই এক পরিসর যেখানে নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতার অন্য এক সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে গেছে, যেমনটা হওয়া দরকার প্রকৃত বা আদর্শ গণতন্ত্রে। আবার সম্ভাবনার সমান্তরালেই বাড়ছে সঙ্কট: মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে বাচিক হিংসা ও স্বেচ্ছাচার, কিংবা মৌলিক শিষ্টতার সীমা লঙ্ঘন। এখনও পর্যন্ত ডিজিটাল পরিসরে এই সব রুখতে কোনও আইন তৈরি হয়নি, এবং আইন তৈরির কথা উঠলেই জেগে উঠছে রাষ্ট্র বা তার নানাবিধ ‘এজেন্সি’র হাতে বাক্‌স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ। পথটি সমস্যাবহুল, কিন্তু রণবীর ইলাহাবাদিয়ার ঘটনায় শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ বোঝাল, এ পথে রাষ্ট্রকে পা ফেলতেও হবে, বুঝেশুনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

freedom of speech Youtube Podcast Supreme Court of India Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}