—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করা সবিশেষ লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্লাস্টিক দূষণের ক্ষেত্রটি তেমনই এক উদাহরণ। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, ভারত সম্প্রতি বিশ্বের সর্বাধিক প্লাস্টিক দূষণকারী দেশের খেতাব অর্জন করেছে। এই গৌরব এমনই অ-সাধারণ যে, গবেষণায় জানা গিয়েছে, ভারত প্রতি বছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ করে, তা দিয়ে ৬০৪টি তাজমহল অনায়াসে ভর্তি করা যায়। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে প্রতি বছর ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যের অধিকাংশেরই উৎস গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলি। ভারতের সঙ্গেই নাইজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চিন এবং পাকিস্তান রয়েছে প্রথম সারিতে। লক্ষণীয়, এক সময় চিন এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করত। কিন্তু বর্জ্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ চিনকে প্রথম থেকে চতুর্থ স্থানে নামিয়ে এনেছে।
কেন প্লাস্টিক দূষণের এমন বাড়বাড়ন্ত, তার উত্তরও পাওয়া গিয়েছে গবেষণায়। উন্নততর প্রযুক্তির সাহায্যে গবেষকরা দেখিয়েছেন, পৃথিবী নামক গ্রহটির প্লাস্টিক দূষণের দুই-তৃতীয়াংশই আসে অসংগৃহীত আবর্জনা থেকে। ভারতে ২০২২ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশোধনী নীতি (২০২১) কার্যকর করা হয়, যেখানে ১৯ ধরনের এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন, ভারতের প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৫৩ শতাংশের জন্য দায়ী অসংগৃহীত পুর আবর্জনা এবং প্রায় ৩৮ শতাংশের জন্য দায়ী ভাগাড়ে আবর্জনা পুড়িয়ে দেওয়ার রীতি। সরকারের তরফ থেকে যদিও দাবি করা হয় যে, এ দেশে প্রায় ৯৫ শতাংশের কাছাকাছি বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চলে, কিন্তু লিডস-এর গবেষকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সরকার প্রদত্ত ওই তথ্যে গ্রামীণ এলাকাকে সংযোজিত করা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানকার অসংগৃহীত বর্জ্য এবং খোলা জায়গায় আবর্জনা পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্যগুলি পাওয়া না যাওয়ায় প্লাস্টিক দূষণের প্রকৃত চিত্রটি বোঝা যায়নি। প্লাস্টিক দূষণের স্বরূপ বুঝতে গেলে অসংগৃহীত বর্জ্যের তথ্য জানা জরুরি। কারণ, বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি ঠিকমতো না হলে মানুষের প্রবণতা থাকে কোনও খোলা জায়গায় সেগুলি জড়ো করে রাখা অথবা পুড়িয়ে দেওয়া। প্লাস্টিকের মতো বর্জ্য পুড়িয়ে দিলে তা হ্রাস পায় ঠিকই, কিন্তু খোলা জায়গায় পোড়ানোর ফলে যে দূষক কণাগুলি উৎপন্ন হয়, তা মানবশরীরের সবিশেষ ক্ষতিসাধন করে।
প্রকৃতপক্ষে ভারতে প্লাস্টিক নিয়ে সরকারি ঘোষণা এবং বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ২০১৮ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণ হ্রাস করার পথে হাঁটবে। অতঃপর এই বিষয়ে আইন কার্যকর হয়ছে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার আদৌ হ্রাস পায়নি। সর্বোপরি, উপযুক্ত বিকল্পের অভাবে এমন অনেক প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে, যেগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। তদুপরি, বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থাটিও যদি মজবুত না হয়, তবে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাটি কোথায় পৌঁছতে পারে, সহজে অনুমেয়। এই ক্ষেত্রটিতে ভারতের শীর্ষস্থান দখলের মধ্যে আগামী দিনের বিপদসঙ্কেত স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy