E-Paper

সুখ দেওয়ার উপায়

কোভিডের ধাক্কা এখনও সম্পূর্ণ সামলে ওঠা যায়নি, তবুও কি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই?

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৫:৩৫
An image of GDP

—প্রতীকী চিত্র।

এমনিতেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নগামী ছিল— কোভিড আরম্ভ হওয়ার আগের চার বছরের প্রত্যেকটি বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। কোভিডের ঠিক আগে সেই আর্থিক বৃদ্ধির হার এসে ঠেকেছিল চার শতাংশের নীচে। ইউপিএ জমানার আর্থিক বৃদ্ধির হারের কথা স্মরণে থাকলে এই আর্থিক বৃদ্ধি প্রবল মর্মবেদনার কারণ হওয়ার কথা। এমন সময় এল কোভিড, অর্থব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেল। তার তিন বছর পরে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে, আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা ছাপিয়ে ৭.২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে ভক্তকুল আনন্দে উদ্বেল— কোভিডের ধাক্কা সম্পূর্ণ সামলে উঠেছে ভারত। এই ‘কৃতিত্ব’র স্বরূপ দর্শনে সামান্য পাটিগণিতই যথেষ্ট। ধরা যাক, কোভিডের ঠিক আগে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের শেষে ভারতের জিডিপি ছিল ১০০ টাকা। ধরা যাক, কোভিড না এলে মোটামুটি বার্ষিক চার শতাংশ বৃদ্ধির হার— অর্থাৎ, প্রতি বছর কমতে কমতে কোভিডের ঠিক আগে ভারত যে হারে এসে ঠেকেছিল— বজায় রাখা যেত। তা হলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের শেষে ভারতের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়াত ১১২ টাকা ৪৯ পয়সা। কোভিডের ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জিডিপি হ্রাস পেয়েছিল ৬.৬ শতাংশ, তার পরের দু’বছরে যথাক্রমে ৯.১ শতাংশ ও ৭.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হওয়ায় ২০১৯-২০ সালের ১০০ টাকা জিডিপি বেড়ে ২০২২-২৩’এ দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ২৪ পয়সায়। অর্থাৎ, ইউপিএ আমলের গড় সাত শতাংশ বৃদ্ধি দূরে থাকুক, কায়ক্লেশে যে চার শতাংশ হারে বৃদ্ধি ঘটছিল, বিশ্বগুরুর ভারতের জিডিপি সেই স্তরেও ফিরে যেতে পারেনি। তবু, ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচনের বিভীষিকার পরিপ্রেক্ষিতে এই হারেও অনেকেই আনন্দিত। দুঃখীকে সুখ দেওয়ার এই সহজ তরিকাটি জানা থাকলে বেচারা মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে নাহক ছুটে মরতে হত না।

না হয় কোভিডের ধাক্কা এখনও সম্পূর্ণ সামলে ওঠা যায়নি, তবুও কি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই? ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধিকে একেবারে তাৎপর্যহীন বলা চলে না, বিশেষত অন্যান্য বৃহৎ অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হারের পরিপ্রেক্ষিতে। তবে, চিন্তার বিষয় অনেকগুলি। প্রথমত, জিডিপির সবচেয়ে বড় অংশ ব্যক্তিগত ভোগব্যয়— তার বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়েছে। অনুমান করা চলে, অতিমারির দমচাপা অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে সাধারণ মানুষ যে টাকা খরচ করেছিলেন, এখন আর সে ভাবে খরচ করতে তাঁরা রাজি নন। অন্য দিকে, কর্মসংস্থানের ছবিটিও আশাপ্রদ নয়— ফলে, হাতে থাকা টাকা খরচ করতে মানুষের আগ্রহ না থাকা অস্বাভাবিক নয়। বেসরকারি লগ্নির সূচক মূলধনি খাতে ব্যয়ের বৃদ্ধির হার গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে বেড়েছে বটে, কিন্তু ভোগব্যয় যথেষ্ট না বাড়লে লগ্নির পরিমাণই বা ঊর্ধ্বমুখী হবে কেন, বিশেষত এই চড়া সুদের হারের বাজারে?

এ দফায় আর্থিক বৃদ্ধির একটি বড় চালক পরিষেবা ক্ষেত্র। কিন্তু, সেই ক্ষেত্রটিও যে আগামী দিনে বৃদ্ধির এই হার বজায় রাখতে পারবে, সেই নিশ্চয়তা নেই। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দু’টি পরিসংখ্যান— এক, শিল্পোৎপাদন ক্ষেত্রে বৃদ্ধির গতি অতি শ্লথ; এবং দুই, আমদানি এবং রফতানি, উভয়ই নিম্নমুখী। প্রথম পরিসংখ্যানটি যদি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ অস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত বহন করে, তবে দ্বিতীয়টি বিশ্ববাজারের শ্লথগতির নির্দেশক। বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের মতো সংস্থার পূর্বাভাস হল, আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার অনেকখানি কমবে— শুধু ভারতের নয়, এই নিম্নগতি বৈশ্বিক। প্রশ্ন হল, ভারতীয় অর্থব্যবস্থা সেই ঝড় সামলানোর জন্য কতখানি তৈরি? এ বছর এল নিনো’র পূর্বাভাস রয়েছে, অর্থাৎ কৃষিতে বৃদ্ধি অনিশ্চিত। অন্য ক্ষেত্রের বৃদ্ধি দিয়ে ভারত সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে কি? দুঃখীকে সুখ দেওয়ার উপায়টি কিন্তু ইতিমধ্যেই নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Economy Financial Condition GDP Rate Pandemic

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy