E-Paper

উপদ্রব

পাকিস্তান এমন একটি অঞ্চলে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী, যেখানে এত কাল ঐতিহ্যগত ভাবে ভারত প্রভাবশালী ছিল।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:৫৯

তবে কি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় জলসীমা আর নিরাপদ রইল না? প্রশ্নটি বেশি করে উঠছে সম্প্রতি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ পিএনএস সইফ-এর নোঙর ফেলার কারণে। লক্ষণীয়, এই একই সময়ে বাংলাদেশ সফরে এলেন পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরফ। এই সফর কেবল কূটনীতির ক্ষেত্রেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও ইঙ্গিতবাহী। ইসলামাবাদের জন্য, পিএনএস সইফ-এর সফর দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক ক্ষেত্রে নতুন প্রাসঙ্গিকতা অর্জনের কৌশলের অংশ। পাকিস্তান এমন একটি অঞ্চলে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী, যেখানে এত কাল ঐতিহ্যগত ভাবে ভারত প্রভাবশালী ছিল। অন্য দিকে, ঢাকার ক্ষেত্রে এই সফর মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের অধীনে বাংলাদেশের বিদেশনীতিতে আরও গভীর পরিবর্তনেরই সঙ্কেত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ দশক পরে প্রথম বার চট্টগ্রামে পাকিস্তানি নৌ-সফরকে ভারতের প্রতি কৌশলগত সঙ্কেত হিসাবেই দেখছেন অনেকে।

বস্তুত, এ বছর চিন সফরকালে ভারত সংক্রান্ত ইউনূসের মন্তব্যই তাঁর অভিপ্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছিল। বেজিং-এ তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে ‘স্থলবেষ্টিত’ হিসাবে বর্ণনা করেন এবং ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ ‘এই অঞ্চলের সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’। এ-হেন শব্দচয়ন শুধু বিপজ্জনকই নয়, ইচ্ছাকৃতও ছিল। এর অর্থ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যা দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্রোহ এবং সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির রণাঙ্গন, সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক একীকরণের জন্য বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। ভুললে চলবে না, ইসলামাবাদ ধারাবাহিক ভাবে যুক্তি দিয়ে আসছে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল একটি ঝুঁকিপূর্ণ করিডর, যা কৌশলগত ভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। অন্য দিকে, বেজিংও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর মাঝে বঙ্গোপসাগরে পিএনএস সইফ-এর উপস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দিল্লির। ভারত দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তার সংযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরকে একটি নিরাপদ সামুদ্রিক অঞ্চল হিসেবে দেখে আসছে। এখন যদি পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত নৌ-আদানপ্রদান শুরু করে, তা হলে ভারতীয় নৌ-অভিযানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের নতুন পথ খুলে যেতে পারে। চিনের উপস্থিতিও জটিল করে তুলতে পারে সমুদ্রপথ ও উপকূলের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে।

শেখ হাসিনার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, অন্তর্বর্তিকালীন সরকার ভারত, চিন এবং বৃহত্তর ইসলামি বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। আর ইসলামাবাদের দৃষ্টিতে, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে তুলে ধরার একটি বৃহত্তর কূটনৈতিক পরিকল্পনা। বাস্তবে যদিও এই যোগাযোগের মূল উদ্দেশ্য এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব খর্ব করা। এমতাবস্থায়, ভারতকে বঙ্গোপসাগরে তার উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সহযোগিতাও রাখতে হবে বইকি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-Bangladesh Safety Diplomacy China

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy