নারী নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বে প্রথম সারিতে। এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে নেই— দেশের মোট মহিলার যত শতাংশ এই রাজ্যে বাস করেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশে সংঘটিত অপরাধের অনুপাত এই রাজ্যে তার তুলনায় বেশি। এ তথ্য বহু আলোচিত। বহু ক্ষেত্রেই নির্যাতনের লক্ষ্য কোনও নাবালিকা— যে বয়সে মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়া, শিক্ষিত, স্বাবলম্বী করে তোলার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেই বয়সেই তারা নির্যাতনের শিকার। সম্প্রতি দুই জেলায় দুই পৃথক ঘটনা এই ফাঁকটির প্রতিই অঙ্গুলিনির্দেশ করল। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক বছর পনেরোর কিশোরীকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে। উদ্ধারের পর যে হোমটিতে তার ঠাঁই হয়, সেখানেও তার উপর জবানবন্দি পরিবর্তনের জন্য নিগ্রহ চালানো হয় বলে অভিযোগ। অর্থাৎ, তথাকথিত ‘সুরক্ষা কেন্দ্র’টিও তাকে নিরাপত্তা দান করেনি। অন্য ঘটনাটি নদিয়ার। সেখানে নাবালিকা স্ত্রী’র উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক মেয়েটির পরিবারের চাপেই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। অতঃপর এই পরিণতি।
ঘটনা দু’টি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হোম নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। হোম থেকে শিশুপাচার, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলিও বিরল নয়। কিছু মাস পূর্বেই হাওড়ার এক বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। সরকারি হোম থেকেও প্রায়শই কিশোর-কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সংবাদ মেলে। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর কিছু আলোড়ন দেখা যায়, অতঃপর হোমগুলি চলে নিজ নিয়মেই। এই ধরনের ঘটনা রুখতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার কথা প্রশাসনের তরফ থেকে নানা সময়ে জানানো হলেও কাজ যে কিছুই তেমন হয়নি, উপরোক্ত ঘটনাটিই তার প্রমাণ। কেন হোমগুলির উপর নিয়মিত নজরদারি চালানো হয় না, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ক’জন হোম-কর্তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে, উত্তরগুলি সম্ভবত রাজনীতির অতলেই তলিয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটিতে দু’টি স্তর রয়েছে। এই ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতক কোনও বাইরের লোক নয়, মেয়েটির স্বামী। বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ককে আদৌ ‘নির্যাতন’ বলা যায় কি না, সংবিধানের ৩৭৫ ধারার ‘দ্বিতীয় ব্যতিক্রম’কে কেন্দ্র করে কেউ সেই কূটতর্ক তুলতে পারেন। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে যে অপরাধ তর্কাতীত, তা হল নাবালিকা বিবাহ। মেয়েটির পরিবার, তার স্বামী এবং স্বামীর পরিবার, সবাই এই অপরাধটিতে দায়ী, এবং প্রত্যেকের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বিধেয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিবাহ করতে বাধ্য করার অর্থ, তাকে সম্ভাব্য (যৌন) নির্যাতনের পথে ঠেলে দেওয়া। নারীর উপর হওয়া নির্যাতনের একটা বড় অংশের পিছনে স্বামী বা অতিনিকট আত্মীয়ের থাকার ঘটনা শুধুমাত্র ভারতের নয়, একটি বৈশ্বিক সঙ্কট। অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যার বিবাহ হলে তার উপর এই নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে, কথাটি পরিসংখ্যানগত ভাবে প্রমাণিত। অতএব, এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলের শাস্তি হওয়া বিধেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy