Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Hunger Index

অপুষ্টির অতিমারি

ঘাটতি খাদ্যে নহে, উদ্যোগে। লকডাউনেও দেশে ফসল উৎপাদন কম হয় নাই, খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত, লোকবলও সরকারের কম নাই।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

ক্ষুধা বাড়িয়াছে, কমিয়াছে খাদ্যের সুরক্ষা। ভারত খাদ্যের অধিকার আইন করিয়াছে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তার সূচকে পিছাইয়াছে দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য হইতে দুই ধাপ সরিয়াছে ভারত। সরকারি পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। অতি-অপুষ্টিতে ভুগিতেছে অন্তত নয় লক্ষ ছয় বৎসর-অনূর্ধ্ব শিশু। সকল শিশুর মধ্যে পুষ্টির ঘাটতির চিত্র কেমন হইতে পারে, তাহা অনুমান করিতেও আশঙ্কা হয়। কোভিড অতিমারি-জনিত লকডাউন এবং বিপুল কর্মহীনতার জেরে খাদ্যাভাব ও অপুষ্টির সমস্যা তীব্র হইয়াছে, সন্দেহ নাই। কিন্তু প্রশ্ন উঠিবে, রাষ্ট্রের ভূমিকা তাহা হইলে কী? ইতিহাস সাক্ষ্য দিতেছে, নূতন সঙ্কটের মোকাবিলা করিতে গিয়া অনেক রাষ্ট্র খুঁজিয়া পাইয়াছে পুরাতন সমস্যার সমাধানসূত্র। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেনের খাদ্যাভাব মিটাইতে যে রেশন ব্যবস্থা চালু হইয়াছিল, তাহাই প্রথম সে দেশের দরিদ্রদের দুই বেলা যথেষ্ট আহারের নিশ্চয়তা জুগাইয়াছিল। এই অভিজ্ঞতা হইতেই খাদ্য ও চিকিৎসার আরও সুষম বণ্টনের পথে হাঁটিয়াছিল দেশটি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কোভিড-বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে অমর্ত্য সেন তাহা মনে করাইয়াছেন।

আজ প্রশ্ন করিতে হইবে, অতিমারি কি এই সুযোগ ভারতকেও দেয় নাই? আট বৎসর পূর্বে খাদ্য নিরাপত্তা আইন পাশ হইবার পরে নিয়মিত খাদ্য বিতরণের বিস্তৃত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নির্মিত রহিয়াছে। কেবল দেশব্যাপী রেশন ব্যবস্থা নহে, অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থা এবং স্কুলের মিড-ডে মিল ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ শিশু এবং মায়ের নিকট পৌঁছাইতে পারে সরকার। পঞ্চায়েত-পুরসভা, রাজ্য ও কেন্দ্র, সকল স্তরের সরকার এই বিশাল, নিবিড় খাদ্যসহায়তা ব্যবস্থার সহিত যুক্ত রহিয়াছে। এই ব্যবস্থা তৎপর হইলে, পর্যাপ্ত অর্থ এবং যথাযথ নির্দেশ পাইলে, শিশু-অপুষ্টির বৃদ্ধি রুখিয়া দেওয়া সম্ভব ছিল। এমনকি উন্নতিও হইতে পারিত। আক্ষেপ, তাহার কোনও চেষ্টাই হইল না, নিষ্প্রাণ নিয়মরক্ষা হইল শুধু। মিড-ডে মিলে রান্না করা খাবারের পরিবর্তে প্রথমে কেবল চাল আর আলু বিতরণ হইল, বহু পরে তাহার সহিত সয়াবিন, ডাল, ছোলা যুক্ত হইল। তাহাতে সম্পূর্ণ, সুষম পুষ্টি শিশুরা পাইবে কী রূপে, তাহা ভাবিয়া দেখা হইল না। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও চালের সহিত ডাল-আলু বিতরণ করিল, এবং সেই পরিষেবাও অনিয়মিত সরবরাহের কারণে বহু জায়গায় ব্যাহত হইল। পুষ্টির অভাব, বিশেষত ডিমের মতো প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশু দুর্বল হইতে বাধ্য, তাহা বুঝিয়াও কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করে নাই।

অতিমারির আর্থিক বিপর্যয়ে স্বভাবতই সরকারি প্রকল্পের খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হইয়াছেন আরও বেশি মানুষ। অধিক চাহিদা মিটাইতে বাড়তি জোগানও সর্বত্র করা হয় নাই। ঘাটতি খাদ্যে নহে, উদ্যোগে। লকডাউনেও দেশে ফসল উৎপাদন কম হয় নাই, খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত, লোকবলও সরকারের কম নাই। নিয়মিত কাজ বন্ধ থাকিবার জন্য বহু সরকারি কর্মী খাদ্য সরবরাহ-সহ জনপরিষেবার নানা কাজে নিযুক্ত হইতে পারিত। বহুবিধ কৌশল গ্রহণের সুযোগ ছিল সরকারের। তাহার কিছুই হইল না, দেশব্যাপী বিপর্যয়ের মুখেও আমলাতন্ত্র আপন নিয়মে চলিয়াছে। কেবল ক্ষুধা তীব্র হইল। অতিমারির অতি-সঙ্কটেও সরকার জাগিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19 Hunger Index
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE