Advertisement
E-Paper

এখনও সময় হয়নি

শুধু নির্মাণ ক্ষেত্রই নয়, অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই চাপ আসছে সুদের হার কমানোর জন্য।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০০
Share
Save

গোটা দুনিয়ায় সুদের হার কমতে আরম্ভ করেছে বলেই ভারতেও তা অবিলম্বে কমাতে হবে, এমন কোনও কথা যে নেই, এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে সে কথা আলোচনা করা হয়েছিল (‘কঠোর নীতির পরে’, ২৫-৯)। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও সে কথাই বললেন। তিনি মনে করিয়ে দিলেন যে, এ দেশে খুচরো পণ্যের মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার এখনও যথেষ্ট চড়া, বিশেষত খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে সুদের হার কমানো হলে তা বিপদকে গভীরতর করতে পারে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের অবস্থানটি গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি বনাম আর্থিক বৃদ্ধির যে দড়ি টানাটানি চলতেই থাকে, তাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে অবিচলিত থাকতেই হবে। সম্প্রতি এক বণিকসভা ও নির্মাণ ক্ষেত্রের একটি সংগঠন এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করল। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ সুদের হার নিয়ে বিচলিত। তাঁরা মনে করেন, সুদের হার নয় শতাংশের সীমা অতিক্রম করলে গৃহঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে তা বড় মাপের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে গৃহঋণের উপরে গড়ে যে হারে সুদ নেওয়া হয়, নয় শতাংশ হারের সঙ্গে তার ব্যবধান খুব বেশি নয়। ফলে, বাজারে ক্রেতার ‘সেন্টিমেন্ট’-এর কথাটি মনে রাখার জন্য ব্যাঙ্কের উপরে চাপ বাড়া স্বাভাবিক। এবং, শুধু নির্মাণ ক্ষেত্রই নয়, অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই চাপ আসছে সুদের হার কমানোর জন্য। এই অবস্থায় মূল্যস্ফীতির হারের কথা মাথায় রেখে কঠোর মুদ্রা নীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্তটি বিলক্ষণ কঠিন। আশা করা যায় যে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবে এবং নীতিগত নমনীয়তা বজায় রাখবে।

ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় চড়া সুদের হার কতখানি ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে, সে প্রশ্নটি যেমন করা প্রয়োজন, তেমনই জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন যে, খাদ্যপণ্যের মতো বাজারে চড়া সুদের হার কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক? শিল্পক্ষেত্রে যে দীর্ঘমেয়াদি শ্লথতা চলছে, তা কতখানি চড়া সুদের কারণজনিত বিনিয়োগ-অনিচ্ছার ফল, আর কতখানি বাজারের সার্বিক চাহিদা কম থাকার কারণে? নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে বারে বারেই প্রমাণ মিলেছে যে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যথেষ্ট না-বাড়ার কারণে বাজারে চাহিদাও সে ভাবে বাড়েনি। এবং, চাহিদা না থাকলে জোগান বাড়ানোরও প্রশ্ন ওঠে না। ফলে, বিনিয়োগও শ্লথ হয়েছে। এই শ্লথ বিনিয়োগ আবার সরাসরি প্রভাব ফেলেছে কর্মসংস্থানের উপরে। তার ফলে জনসংখ্যার একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশের ক্রয়ক্ষমতা আরও সঙ্কুচিত হয়েছে, এবং তা ফের প্রভাবিত করেছে সার্বিক চাহিদাকে। সুদের হার কমালেই এই দুষ্টচক্র ভাঙা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নটি নিজেদের করতেই হবে। বস্তুত, নির্মাণ ক্ষেত্রে একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এখনও যত লোক ঋণ নিচ্ছেন, তাঁদের একটি অংশ সেই ঋণ শোধ করতে পারবেন না, ফলে ব্যাঙ্কের খাতায় অনাদায়ি সম্পদের পরিমাণ বাড়বে। অন্য দিকে, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বৃহত্তম কারণটি সম্ভবত কৃষির উপরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রমাণ। প্রতি বছরই কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং তা সরাসরি প্রভাব ফেলছে মূল্যস্তরে। সুদের হার বাড়িয়ে এই সমস্যাটিরও সমাধান করা মুশকিল। অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধারের দায়িত্ব এই মুহূর্তে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের যতখানি, কেন্দ্রীয় সরকারের তার চেয়ে ঢের বেশি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RBI Shaktikanta Das

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}