E-Paper

ভারত বাদ?

উত্তোলন খাতের প্রায় ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে চিন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকাও পালন করে তারা।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৯

এক নীরব কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে ভূ-রাজনীতিতে। অতি সম্প্রতি আমেরিকা ‘প্যাক্স সিলিকা’ নামে একটি নতুন কৌশলগত উদ্যোগের সূচনা করেছে। লক্ষ্য, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উদীয়মান প্রযুক্তি, উন্নত উৎপাদন এবং সেমিকন্ডাক্টরকে ঘিরে একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা। আমেরিকা-সহ এই জোটের বাকি সদস্যরা হল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন, ইজ়রায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়া। তবে এই জোটে নেই ভারত। ফলে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধীরা স্বাভাবিক ভাবেই সরব হয়েছে ভারত-আমেরিকার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে। সূচনার সময়কালটিও তাৎপর্যপূর্ণ। প্যাক্স সিলিকা থেকে ভারতকে বাদ রাখা হল এমন এক সময়ে, যখন উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত আলোচনা সত্ত্বেও ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তি অধরাই রয়ে গিয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্যাক্স সিলিকাকে ওয়াশিংটন তাদের প্রধান উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরেছে এবং এটিকে এই ক্ষেত্রগুলিতে চিনা আধিপত্য মোকাবিলার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। লক্ষণীয়, বর্তমানে বৈশ্বিক বিরল খনিজ উত্তোলন খাতের প্রায় ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে চিন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকাও পালন করে তারা। এমতাবস্থায় প্যাক্স সিলিকা-র মূল লক্ষ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরবরাহ শৃঙ্খল জুড়ে দুর্বলতা ও সুযোগগুলো যৌথ ভাবে চিহ্নিত করা, যৌথ উদ্যোগ এবং সহ-বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা, এবং ‘উদ্বেগের কারণ এমন দেশগুলো’-র নাগাল থেকে সংবেদনশীল প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোকে রক্ষা করা। বলা বাহুল্য, এই উদ্যোগের আসল লক্ষ্য— চিন এত কাল ধরে যে আধিপত্য ভোগ করে আসছে, প্যাক্স সিলিকা-র অছিলায় তা কেড়ে নিতে চায় আমেরিকা।

অনেকের মতে, এই উদ্যোগে এমন দেশগুলিকেই অংশীদার করা হয়েছে, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খল সংক্রান্ত ক্ষেত্রে রয়েছে প্রথম সারিতে। ভারত বর্তমানে এই ক্ষেত্রগুলিতে ততটা উন্নত না হওয়ায় এই তালিকায় নাম না থাকার কারণ হতে পারে। তবে কি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির মানচিত্রকে আমেরিকা যে ভাবে নতুন করে সাজাচ্ছে, তার একটি সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত এখানে? না কি এ হল বাণিজ্য সংঘাতের প্রতিফলন? অনেকের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য, বিশেষত কৃষি খাতে, ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য চাপ বাড়ছে। ভুললে চলবে না, মেক্সিকো ভারতের শীর্ষ ২০টি বাণিজ্য অংশীদারের তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও, সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের উপরে ৫০% শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করে। শুধু তা-ই নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় বাসমতী চালের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ইঙ্গিত স্পষ্ট: দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়াদিল্লির নতুন কূটনৈতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পেও দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সুযোগ এলে আবেদনকারী হিসেবে নয়, বরং অংশীদার হিসেবে যোগ দিতে পারে ভারত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

america United States

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy