E-Paper

নতুন সমীকরণ

রিয়াধের এমন এক অংশীদারের প্রয়োজন ছিল, যার মাধ্যমে সে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইজ়রায়েলের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে পারে। আমেরিকার বাইরেও নিরাপত্তা বিকল্প রয়েছে তার হাতে, অনেকটা হাতের কাছে।

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:১১

সমস্যা কখনও একা আসে না। বিশেষত আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির সমস্যা। দিল্লি এখন আবার সেটা বুঝছে। পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল ভারত, বর্তমানে সেই চাপের শিকার সে নিজেই। সম্প্রতি সৌদি আরবে গিয়ে ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করে এলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। চুক্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান বা সৌদি আরব অন্য কোনও দেশের আগ্রাসনের শিকার হলে, তা উভয়ের উপরেই আঘাত হিসাবে বিবেচনা করা হবে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এ ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে জানিয়েছে যে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারেই দেখছে। লক্ষণীয়, ১৯৬০ সাল থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৌদি আরবের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বহু বছর যাবৎ ইসলামাবাদ শুধু সৌদিদের সামরিক প্রশিক্ষণ বা সৌদি মাটিতে সেনা মোতায়েনই নয়, রিয়াধের কাছে অস্ত্রও বিক্রি করেছে। তবে নতুন এসএমডিএ গুণগত ভাবে ভিন্ন। এটি দুই দেশের কয়েক দশকের নিরাপত্তা সহযোগিতাকে ন্যাটো-র যৌথ প্রতিরক্ষা ধারার অনুরূপ একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতিতে রূপান্তরিত করল। বস্তুত, এ ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণটিও ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ— তেল আভিভ-এর আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে আরব দুনিয়ার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মাঝে দোহায় ইজ়রায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরেই চুক্তিটি সম্পন্ন হল। তা ছাড়া, সাম্প্রতিক কালে পশ্চিম এশিয়া থেকে ওয়াশিংটনের পশ্চাদপসরণ অনুভূত হওয়ার পর থেকেই, আমেরিকার নিরাপত্তার উপর রিয়াধের নির্ভরতাও দুর্বল হয়ে পড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় রিয়াধের এমন এক অংশীদারের প্রয়োজন ছিল, যার মাধ্যমে সে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইজ়রায়েলের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে পারে। আমেরিকার বাইরেও নিরাপত্তা বিকল্প রয়েছে তার হাতে, অনেকটা হাতের কাছে। এবং সেই বিকল্প এমনকি পারমাণবিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।

এ দিকে, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষায় সম্প্রসারণের মাধ্যমে সাম্প্রতিক কালে দিল্লিও রিয়াধের সঙ্গে তার কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। তবে সন্দেহের অবকাশ নেই, এসএমডিএ ভারত-পাকিস্তান নিরাপত্তা সমীকরণে নতুন জটিলতার সূচনা করল। পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উপসাগরীয় নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দিল। এতে রিয়াধের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সৌদি আরবের সমর্থন পেয়ে পাকিস্তান কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ এবং জল অধিকারের মতো বিষয়গুলিতে কঠোর অবস্থান নিতে সাহসী বোধ করতে পারে— যা ভারতের পক্ষে সুসংবাদ নয়। তা ছাড়া, সৌদির তরফে আগামী দিনেও পাকিস্তানের জন্য তেলে ভর্তুকি থেকে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকলে, তা পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণে সাহায্য করতে পারে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেটাও উদ্বেগের। রিয়াধ যদি সত্যিই পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতাকে তার নিরাপত্তার অন্যতম আশ্বাস হিসেবে দেখে, তা হলে ভবিষ্যতে পশ্চিম এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও বেশি জড়িয়ে পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়া। তা কখনওই চাইবে না দিল্লি। ফলে আগামী দিনে পশ্চিম এশিয়ার সমীকরণ নতুন করে কষাই বুদ্ধিমানের কাজ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diplomacy america Iran israel UAE Pakistan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy