Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Mid Day Meal

পুষ্টির শর্ত

মিড-ডে মিলে প্রত্যহ ডিম পরিবেশনে সরকারকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানাতে হচ্ছে, এ তথ্যটিই সবিশেষ লজ্জার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৫:০০
Share: Save:

অপুষ্টি বাড়ছে। বাড়ছে স্কুলে অনুপস্থিতির হারও। এই দুই ভিন্নধর্মী সমস্যার সমাধান হিসাবে ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ির মিড-ডে মিলে সপ্তাহে ছ’দিন রোজ একটি করে ডিম দেওয়ার অনুরোধ করেছেন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ়। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, অপুষ্টির নিরিখে ঝাড়খণ্ডের শিশুরা বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করে, উপরন্তু সেখানে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হারও উদ্বেগজনক ভাবে বেশি। অন্য দিকে, প্রতি দিন একটি করে ডিম খেলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের অভাব যে অনেকটাই পূরণ হতে পারে, তা বহু আলোচিত। সেই সূত্রেই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, মিড-ডে মিলে প্রতি দিন ডিম জোগানোর ব্যাপারে ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিজ্ঞার কথা। সেই প্রতিজ্ঞা পূরণের সময় এখন এসেছে।

মিড-ডে মিলে প্রত্যহ ডিম পরিবেশনে সরকারকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানাতে হচ্ছে, এ তথ্যটিই সবিশেষ লজ্জার। মিড-ডে মিল প্রকল্পে শিশুদের পাতে কী তুলে দেওয়া উচিত, তা পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের স্থির করার কথা। এবং সেখানে ডিমের প্রয়োজনীয়তা না-জানার কথা নয়। কিন্তু অনেক সময়ই পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যায়, শিশুদের পাত থেকে ডিম, ডালের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারগুলি উধাও হয়ে যায়। যেমন, কিছু দিন আগেই সংবাদে প্রকাশ পেয়েছিল যে, পশ্চিমবঙ্গে অগ্নিমূল্যের বাজারে শিশুদের সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও এক দিন করে তা দেওয়া হয়েছে, কোথাও কম পরিমাণ ডিমের ভুজিয়া খিচুড়িতে মেশানো হয়েছে। মিড-ডে মিলে পড়ুয়াপ্রতি দৈনিক বরাদ্দের তুলনায় বাজারে একটি ডিমের দাম বেশি। এর সঙ্গে যোগ হবে বাকি আনাজ, তেল, মশলা, গ্যাসের দাম। পরিস্থিতি এমনই যে, এক দিক ঢাকতে গেলে অন্য দিক বেআব্রু হয়ে পড়ে। এবং সুষম খাদ্য শিশুদের কাছে অধরাই থেকে যায়। অথচ, এই দ্বিপ্রাহরিক খাবার সরকারের দয়ার দান নয়। এটি শিশুদের অধিকার। দরিদ্র শিশুরা যাতে একবেলা অন্তত ভরপেট খাবার পায় এবং সেই টানে যাতে স্কুলে উপস্থিতির হার বাড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এই কর্মসূচির সূচনা। সেখানে পুষ্টিতে টান পড়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।

এবং মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি যখনই ওঠে, তখনই কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক দোষারোপের পর্ব শুরু হয়ে যায়। অথচ, বিষয়টি দায় ঠেলার নয়, দায়িত্বের। শিশুর স্বাস্থ্য এবং তার শিক্ষার দায়িত্ব। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারগুলিকে এই খাতে পৃথক ভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ, শিশুর পুষ্টি বাদ দিয়ে কোনও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি সফল হতে পারে না। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, অতিমারিতে দীর্ঘ কাল স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুর পুষ্টিতে ঘাটতি দেখা গিয়েছে। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে পাঁচ বছরের নীচে থাকা ঝাড়খণ্ডের ৬৭.৫ শতাংশ শিশু রক্তাল্পতায় ভুগছে। এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখেই ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি শিক্ষা নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গকেও। জঁ দ্রেজ়-এর চিঠিটি ঝাড়খণ্ড সরকারের উদ্দেশে লেখা হলেও, বাস্তবে এতে সারা ভারতের শিশুদের ন্যূনতম চাহিদার কথাটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Jharkhand Eggs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE