বহু কাল ধরেই অভিযোগ ছিল— সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া চায় বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাব সংস্থা। এ বার সরকারের সিদ্ধান্তে সংস্থাগুলির জন্য সেই পথ আরও প্রশস্ত হওয়ারই আশঙ্কা বাড়ল। সম্প্রতি সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সংশোধিত ‘মোটর ভেহিকলস অ্যাগ্রিগেটর গাইডলাইনস, ২০২৫’ অনুযায়ী, আগামী দিনে ব্যস্ত সময়ে প্রয়োজনে দ্বিগুণ ভাড়াও চাইতে পারবে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি। যদিও এত দিন মূল ভাড়ার সর্বাধিক দেড় গুণ টাকা দাবি করা যেত। তবে, কম চাহিদার সময় এই ভাড়াই মূল ভাড়ার কমপক্ষে ৫০ শতাংশও হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। নির্দিষ্ট রুটে মূল ভাড়া কত হবে তা নির্ধারণ করবে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে, যাত্রীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ক্যাব সংস্থাগুলিকে অবশ্যই গাড়িতে অনুসরণকারী ব্যবস্থা ভেহিকল লোকেশন অ্যান্ড ট্র্যাকিং ডিভাইস (ভিএলটিডি) রাখতে হবে। রাজ্যগুলিকে তিন মাসের মধ্যে সংশোধিত নির্দেশিকা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অপর্যাপ্ত গণপরিবহণ, ট্যাক্সি চালকদের প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি, ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি, নিরাপত্তা এবং যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব থেকে মানুষকে রেহাই দিতেই দেড় দশক আগে চালু হয়েছিল এই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা। তবে এই পরিষেবা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় স্বমহিমায় আবির্ভূত হতে দেখা গিয়েছে পুরনো সমস্যাগুলিকে। প্রযুক্তিগত ভাবে অব্যাহত রয়েছে প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি। শুধু ছোট শহর নয়, বড় শহরেও অ্যাপ ক্যাব ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, পছন্দের গন্তব্য না পেলে কিংবা ভাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হবে জানলে ‘রাইড’ বাতিল করেন চালকরা। প্রয়োজনের সময়ে অপ্রতুলতা, ভাড়া নির্ধারণে স্বচ্ছতার অভাবের পাশাপাশি যথেষ্ট উষ্মা রয়েছে পরিষেবাগুলির গ্রাহক সহায়তার মান নিয়েও। যাত্রা বাতিল, বেশি ভাড়া নির্ধারণ বা চালকের খারাপ আচরণ সম্পর্কিত অভিযোগগুলি প্রায়শই হয় স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া দ্বারা অমীমাংসিত থাকে অথবা যথাযথ সমাধান করা হয় না। অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব স্বাভাবিক ভাবেই গ্রাহকের অসন্তোষ বাড়ায়। অন্য দিকে, যাত্রী-নিরাপত্তার জন্য ‘রিয়াল টাইম ট্র্যাকিং’ এবং ‘ড্রাইভার রেটিং’ চালু করা হলেও বিশেষত মহিলাদের প্রতি ড্রাইভারদের অশালীন ব্যবহারের একাধিক ঘটনা এই ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সরকারি নীতি এই সমস্যাগুলির সমাধানের কথা বলছে। কিন্তু, শুধু নীতি নির্ধারণই যথেষ্ট নয়, নজরদারি এবং নিয়মভঙ্গের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি জরুরি। চাহিদার সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া ক্যাব সংস্থাগুলি যাতে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যে কোনও খামতি না রাখে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কারচুপি করে যাত্রীদের থেকে বাড়তি অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল বা কয়েক মাসের জন্য পরিষেবা স্থগিতের মতো পদক্ষেপ করা যেতে পারে। অন্য দিকে, গ্রাহক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিএলটিডি থেকে সংগৃহীত তথ্য শুধু সংশ্লিষ্ট অ্যাপ ক্যাব সংস্থার সঙ্গেই নয়, অতি দ্রুত প্রশাসনের সঙ্গেও ভাগ করতে হবে, যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা যায়। একই সঙ্গে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকেও তাদের গ্রাহক সহায়তা পরিষেবার মান আরও যাত্রী-সহায়ক করে তুলতে হবে, যাতে স্বল্প সময়েই কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। উপভোক্তার অধিকার এবং নিরাপত্তা রক্ষা করতেই হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)