E-Paper

অকালমৃত্যু

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রাজ্যে ৭০ শতাংশ প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে সিজ়ারের পরে। অর্থাৎ, সিজ়ার-পরবর্তী সঙ্কটজনক অবস্থা মোকাবিলার মতো পরিকাঠামোর অভাব।

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৫

বিশ্বে সামগ্রিক প্রসূতি-মৃত্যুর হার (মেটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো বা এমএমআর) ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৭০ বা তার নীচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সময়সীমা ছুঁতে হাতে মাত্র পাঁচ বছর। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে এই হার এখনও ১০০-র উপরে, যা সামগ্রিক ভাবে জাতীয় হারের চেয়েও অনেকটাই বেশি। প্রতি এক লক্ষ জীবিত সন্তান প্রসবের নিরিখে প্রসূতি-মৃত্যুর এই আনুপাতিক হার হিসাব করা হয়। সে দিক থেকে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ বা স্যালাইন ব্যবহারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি পরিস্থিতি শোধরানোর চেষ্টা হিসাবে দেখা যেতে পারে। সিজ়ারের সময় প্রসূতির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কী ধরনের স্যালাইন ও ফ্লুইড ব্যবহার করতে হবে, বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। বলা হয়েছে, সিজ়ারের পর কোন স্যালাইন, কত মাত্রায়, কত ক্ষণ ধরে দিতে হবে, তা-ও।

লক্ষণীয়, নির্দেশিকাতে যা আছে, তার কোনওটাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অজানা থাকার কথা নয়। ফের সেগুলি উল্লেখের অর্থ, সঙ্কটের গভীরে না ঢুকে স্বাস্থ্য দফতর চিরাচরিত অভ্যাসে চিকিৎসক, সেবাকর্মীদের উপরেই দায় ঠেলে দিতে চাইছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সিজ়ারের পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যেক প্রসূতির রক্তচাপ, নাড়ির গতি, অক্সিজেনের মাত্রা-সহ বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার তালিকা পূরণের কথা। কিন্তু পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ধুঁকতে থাকা জেলা, মহকুমা, গ্রামীণ, ব্লক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এমনকি প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও বাস্তবে তা সম্ভব কি? এই বছরের গোড়ায় একই দিনে অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম দেওয়া পাঁচ প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মেদিনীপুর মেডিক্যালে। এক জনের মৃত্যুও হয়। অভিযোগ উঠেছিল একটি নির্দিষ্ট সংস্থার নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহারের প্রতি। জানা গিয়েছিল, কর্নাটক সরকার সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর রাজ্য সরকারও একই নির্দেশ দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওই স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে পৌঁছেছিল, সুস্পষ্ট উত্তরও মেলেনি। রাজ্য সরকার শুধুমাত্র কিছু সংস্থার স্যালাইন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং তদন্ত কমিটি গড়েই দায় সেরেছে। আশঙ্কা, এ বারও গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশমতো কিছু নির্দেশিকা জারিতেই স্বাস্থ্য দফতর সীমাবদ্ধ থাকবে।

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রাজ্যে ৭০ শতাংশ প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে সিজ়ারের পরে। অর্থাৎ, সিজ়ার-পরবর্তী সঙ্কটজনক অবস্থা মোকাবিলার মতো পরিকাঠামোর অভাব। ২০২৪-২৫ আর্থিক বর্ষে সবচেয়ে বেশি প্রসূতি-মৃত্যু হয়েছে হাওড়া ও পুরুলিয়ায়। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি-সহ একাধিক জেলাতেই এমএমআর নব্বইয়ের অধিক। এ সব জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে, সেগুলি বিবেচনায় আনা হয়েছে কি? সিনিয়র চিকিৎসকদের শূন্যপদ পূরণ হবে কবে? ‘রেফার’ রোগ সারানো হবে কবে? নজর দেওয়া প্রয়োজন নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যার উপরেও, ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্প সত্ত্বেও যে ধারায় এখনও রাশ টানা যায়নি। ত্রুটি বহুবিধ, বহু ক্ষেত্রের। সেগুলি না শুধরে শুধু স্যালাইন-সহ চিকিৎসক, সেবাকর্মীদের কাঠগড়ায় তুললে আরও অনেক মা অকালে হারিয়ে যাবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saline medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy