চার্লি কার্কের মতো প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মীর হত্যা আমেরিকায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাপ্রবাহে সর্বশেষ ও ভয়ঙ্করতম সংযোজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রকাশ্য স্থানে আয়োজিত সভায়, অগণিত লোকের চোখের সামনে আততায়ীর ছোড়া গুলিতে এ-হেন মৃত্যু শুধু দুর্ভাগ্যের নয়, আতঙ্কেরও— নিহত মানুষটি রাজনৈতিক বিশ্বাসে যতই কট্টর ও উগ্র হোন না কেন। বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের লালন ও রক্ষণে আমেরিকার এক সুদীর্ঘ ঐতিহ্য আছে— অন্তত ছিল— যা আবিশ্ব উদাহরণীয়। নেতা-জনপ্রতিনিধি বা তাঁদের সহযোগীরা চাঁছাছোলা ডেমোক্র্যাটই হোন বা তস্য গোঁড়া রিপাবলিকান, রাজনৈতিক বিশ্বাসের জেরে তাঁদের কেউ খুন হয়ে যাবেন, এমন ঘটনা অন্তত সে দেশে অবিশ্বাস্য। চার্লি কার্কের হত্যায় সেই বিশ্বাস প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।
হত্যা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এই বিশ্বাস আরও টলিয়ে দিতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার শাসনে এমনিতেই আমেরিকায় রাজনৈতিক বিভেদ-বিদ্বেষ তুঙ্গে। এখন আর তা শুধু রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট দ্বৈরথে থেমে নেই— জাতি ধর্ম বর্ণ অভিবাসন থেকে বাণিজ্যশুল্ক, সবই এই বিভেদনীতির অস্ত্র। সমস্যার জায়গাটি এই যে, ট্রাম্প সরকার যে কোনও রাজনৈতিক ও নাগরিক বিরোধিতাকে খাড়া করছে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ নীতির বিরুদ্ধতা বলে। মেরুকরণের এই তুঙ্গমুহূর্তে চার্লি কার্কের মতো ‘কাছের লোক’-এর হত্যা অগ্নিতে ঘৃতাহুতির সমান। এই হত্যার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ যখন বিভ্রান্ত, তখন সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্রপ্রধানের তরফে শান্তি-শৃঙ্খলার বার্তা। ইউটা প্রদেশের রিপাবলিকান গভর্নর সংযত জন-আচরণের দাবি তুলেছেন, অথচ ট্রাম্প সে পথে না হেঁটে চার্লি-হত্যার দায় চাপিয়েছেন বামপন্থী ও বিরোধীদের উপরে। অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ অতি বিপজ্জনক, খোদ প্রেসিডেন্টের উস্কানিতে বিরোধী দল-মতপন্থীদের উপরে হিংসা বা হামলার আশঙ্কা অমূলক নয়। এরই মধ্যে কিছু প্রভাবশালী ট্রাম্প-সমর্থক দাবি তুলেছেন, চার্লি-হত্যায় দুঃখপ্রকাশ না করা ‘বিরোধী’দের যেন চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা তো বলেই দিয়েছেন, চার্লির মতো ‘সাধারণ নাগরিক’দের লক্ষ্য করে বিরোধীদের সুপরিকল্পিত অভিযান চলছে, এই হত্যা তারই অংশ।
রাজনীতির বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই হত্যার ‘প্রত্যাঘাত’ একটা আসবেই। তা কী ভাবে, কোন পথে হবে— ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীবিশেষকে দোষী ঠাওরে রাষ্ট্রের নিজস্ব ‘বিচার’ শুরু হবে কি না, সেটিই দেখার। ট্রাম্প প্রশাসন সংবিধানের ধার ধারে না, বিচারব্যবস্থারও না— চার্লি কার্কের হত্যার জবাবে অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরিও তার কাছে কঠিন নয়। সমাজমাধ্যমে লোক খেপিয়ে তোলা এখন সবচেয়ে সহজ, সেই কাজটি এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। পরের ধাপটি জনপরিসর, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নটি দৃশ্যমান বলে তা একটু জটিল, কিন্তু অসম্ভব নয়— যেখানে সেনা, পুলিশও হাতে। ডেমোক্র্যাট-শাসনাধীন বড় শহরগুলিতে অপরাধ দমনের নামে পাল্টা দমননীতি বা প্রদেশগুলির কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেওয়া— হতে পারে সব কিছুই। একটি হত্যাকাণ্ড আমেরিকার অদূর ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)