Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণ

সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে ছয়টি স্কুলের চুরাশি জন ছাত্রছাত্রী ক্লাস করছে পুজোর ছুটির দিনগুলিতে, যাতে দীর্ঘ লকডাউনের ক্ষতি পূরণ হয়।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩১
অনলাইন শিক্ষা।

অনলাইন শিক্ষা। ফাইল চিত্র।

অনলাইন শিক্ষা ক্লাসে পঠনপাঠনের স্থান নিতে পারেনি। বইয়ের বাক্য পড়ে অর্থ উদ্ধার, নিজের বক্তব্য গুছিয়ে লেখা, অঙ্ক কষা, এমন সব ক্ষমতাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু শিশুর। স্কুল খোলার পর একাধিক মূল্যায়নে বোঝা গিয়েছে যে, পড়ুয়ারা আগে যা শিখেছিল তার অনেকটাই ভুলে গিয়েছে, অনেকের চলে গিয়েছে লেখাপড়ার অভ্যাসও। কেবল স্পষ্ট হয়নি ক্ষতিপূরণের উপায়। কী করলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের শ্রেণি-উপযোগী দক্ষতা ফিরে পাবে, সে বিষয়ে শিক্ষা দফতর কোনও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ঘোষণা করেনি। গতানুগতিক ভাবেই ক্লাস এবং ছুটির বাঁধা রুটিনে এ রাজ্যের স্কুলগুলি চলছে। তারই মধ্যে বিশেষ উল্লেখ্য কলকাতার ছয়টি স্কুল। সংবাদে প্রকাশ, সরকারি, বা সরকার-পোষিত ওই স্কুলগুলির শিক্ষকরা একত্রে পুজোর ছুটির মধ্যে নিয়মিত ক্লাস করালেন। সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে ছয়টি স্কুলের চুরাশি জন ছাত্রছাত্রী ক্লাস করছে পুজোর ছুটির দিনগুলিতে, যাতে দীর্ঘ লকডাউনের ক্ষতি পূরণ হয়। নানা জেলায়, নানা ব্লকে, বহু শিক্ষক পড়ুয়াদের স্বার্থে এমন দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ করেছেন, সন্দেহ নেই। তাঁদের সকলের কথা সংবাদে আসেনি। তাঁদের সকলের সাধুবাদ প্রাপ্য। এ কেবল শিক্ষাব্রতীদের সদিচ্ছার প্রকাশ বলে নয়, এমন উদ্যোগের সাফল্যের সম্ভাবনা যথেষ্ট, তা প্রমাণিত।

ইতিপূর্বে নানা রাজ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গরমের ছুটিতে স্কুলে শিবির করে পঠন-পাঠন হলে পিছিয়ে-পড়া পড়ুয়াদের দ্রুত উন্নতি হয়। অনেকগুলি রাজ্য এমন শিবির নিয়মিত করার উদ্যোগও করেছিল। এখন এর প্রয়োজন তীব্রতর। দীর্ঘ লকডাউনের জন্য শিক্ষা-বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বহু পড়ুয়া স্কুলে ফেরেনি। কিন্তু সেখানেই বিপর্যয় শেষ হয়নি। স্কুলে ফিরে এসেও লেখাপড়ার হালে পানি না পেয়ে বহু ছেলেমেয়ে ছেড়ে দিচ্ছে স্কুল। জেলার কোনও কোনও সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে গিয়েছে। শিশুরা স্কুল থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার আগেই তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে পড়াশোনার মূলস্রোতে, তা বুঝেই শিক্ষকদের একাংশ তৎপর হয়েছেন। কত স্কুল পুজোর ছুটিতেও দরজা খুলে রেখেছে পঠন-পাঠনের জন্য, টুকরো টুকরো সংবাদে তার ইঙ্গিত মিলেছে ইতিমধ্যেই।

অনেক নাগরিক সংগঠনও পড়াশোনার ক্ষতিপূরণের উদ্দেশ্যে পড়ানোর উদ্যোগ করেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গৃহশিক্ষকদের এক বিপুল বাহিনী, পশ্চিমবঙ্গে যার উপর অভিভাবকদের নির্ভরতা ভারতের অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় বেশি। কিন্তু আশঙ্কা হয়, এই সব উদ্যোগ প্রান্তেই রয়ে যাবে, স্পর্শ করতে পারবে না অধিকাংশ শিশুর জীবন। তার কারণ, এ দেশের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক সমস্যা এই যে, প্রতিটি শিশুর যথাযোগ্য দক্ষতা তৈরি করা তার প্রধান উদ্দেশ্য নয়। পাঠ্যক্রম দ্রুত শেষ করাই হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষকদের লক্ষ্য। এর ফলে প্রতি শ্রেণিতে বেশ কিছু শিশু শ্রেণির উপযোগী দক্ষতা আয়ত্ত না করেই পরবর্তী শ্রেণিতে ওঠে। লকডাউনের সুযোগে এই সমস্যা আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। স্কুলের লেখাপড়াকে শিশুর, বিশেষ করে পশ্চাৎপদ শিশুর উপযোগী করার কত প্রয়োজন, অতিমারি তা স্পষ্ট করেছে। এই কর্তব্য প্রতিটি স্কুল, প্রতিটি শিক্ষকের। অতিমারি-উত্তর কালে বিশেষ উদ্যোগের পরিকল্পনা করতে হবে শিক্ষা দফতরকে।

Online Education Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy