E-Paper

ঝড়ের দাপট

খুব কম সময়ের মধ্যে আকাশ কালো করে তীব্র গতির ঝড়, যার স্থায়িত্ব ১৫-২০ মিনিট— গত কয়েক বছরে তার সংখ্যা বড় কম নয়।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪০

— ফাইল চিত্র।

জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়িতে সম্প্রতি যে ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালাল, যাকে আবহবিদরা ‘মিনি টর্নেডো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটি লক্ষণীয়। ঝড়-পরবর্তী টুকরো ছবিগুলি আতঙ্ক ধরায়। কোথাও গাছের মগডাল থেকে ঝুলছে তোশক, প্লাস্টিকের চেয়ার, কোথাও উপড়ে পড়েছে বড় বাঁশঝাড়। কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামটি। হাজারের উপর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, মাটিতে মিশেছে সমস্ত কাঁচা বাড়ি, উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জন, আহত শতাধিক। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি গ্রীষ্মের শুরুতে অথবা গভীর নিম্নচাপের সঙ্গী হয়ে স্থানীয় ভাবে সৃষ্ট প্রবল ঝড় প্রত্যক্ষ করলেও এবং তাদের বেশ কয়েকটির চরিত্র টর্নেডো গোত্রের হলেও আচমকা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই পর্যায়ের বিপর্যয় বিরল, খানিক অপ্রত্যাশিতও বটে।

তবে, খুব কম সময়ের মধ্যে আকাশ কালো করে তীব্র গতির ঝড়, যার স্থায়িত্ব ১৫-২০ মিনিট— গত কয়েক বছরে তার সংখ্যা বড় কম নয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোর বর্ষার মধ্যে আচমকা সৃষ্টি হওয়া মিনিট কয়েকের ঝড়ে সাগরদ্বীপে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সরকারি কটেজ ও কিছু অস্থায়ী দোকান। একই বছর মে মাস নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাত হানার আগে হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশ লন্ডভন্ড হয়ে যায় কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হওয়া ঝড়ের ধাক্কায়। ২০১৯ সালের সাগরদিঘির ঝড় অনেক বেশি ক্ষতি করেছিল সাতটি গ্রামের। অর্থাৎ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের টর্নেডো-হানার অনুরূপ না হলেও এই রাজ্যেও টর্নেডো বিরল নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গতির ঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে— এ আশঙ্কার কথা পূর্বেই শোনা গিয়েছিল। সেই ভবিষ্যদ্বাণী স্মরণে রাখলে ঝড় থেকে সুরক্ষার স্থায়ী উপায়গুলি রাজ্য সরকারকে স্থির করতে হবে অবিলম্বে। প্রথমত, পূর্বাভাসের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। জেলাগুলিতে মিনি টর্নেডোর পূর্বাভাস না থাকায় বহু মানুষ প্রস্তুতির সময়টুকুও পাননি। দ্বিতীয়ত, বিপজ্জনক জায়গা থেকে যাতে বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা যায়, তার স্থায়ী এবং কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে যে সময় পাওয়া যায়, টর্নেডোর ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না। তাই, সমগ্র ব্যবস্থাটিতে সময় এবং কাজের গতি— উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে, ভুক্তভোগী দেশগুলির গৃহীত ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে।

এবং সর্বাগ্রে ঝড় ও ঝড়-পরবর্তী ক্ষতি নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিপর্যয় দলীয় স্বার্থ পূরণের উপলক্ষ হতে পারে না, সেখানে দলমত নির্বিশেষে দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়ানোই মানবধর্ম। অন্তত কয়েক দশক আগে অবধিও এই রাজ্য বিপর্যয়-অন্তে সেই মানবিক রাজনীতিই দেখে এসেছে, সম্প্রতি যা বিলুপ্তপ্রায়। বরং, কোনও বিপর্যয় ঘটার অব্যবহিত পরই পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি, বিদ্রুপ, এমনতি ত্রাণ নিয়ে রাজনীতিও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে জায়গায় যার জোর বেশি, দুর্গতদের সাহায্যদানের অধিকারটি যেন শুধুমাত্র তারই, ‘অপর’দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। দুর্ভাগ্য, এই সমগ্র কুনাট্যে খাঁড়ার ঘা পড়ে সেই মানুষগুলোর উপর যাঁরা ইতিমধ্যেই সর্বহারা হয়েছেন। সমানুভূতি একটি মানবিক গুণ। কোনও দলীয় পতাকা তাকে আদৌ কুক্ষিগত করতে পারে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Natural Disaster North Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy