Advertisement
E-Paper

প্রশমনের পথ

সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার আরও একটি প্রত্যক্ষ কারণ থাকতে পারে। এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীর দুই অঞ্চলেরই হিন্দু ভোট সংগঠিত করার প্রয়াস নিয়েছে বিজেপি সরকার।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৬
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।

রাজৌরিতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানা উপলক্ষে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে তিনি ঘোষণা করলেন: প্রথমত, যে জঙ্গিরা এই ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা কোনও মতেই ছাড় পাবে না, এবং দ্বিতীয়ত, গোটা জম্মু অঞ্চল জুড়ে ৩৬০ ডিগ্রির একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে তিন মাসের মধ্যে। অবশ্য তার সঙ্গে এই দাবিটিও তিনি জুড়ে দিয়েছেন যে, জঙ্গি আক্রমণ ও নিধনের সংখ্যা এখন অনেকটাই কমেছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় আক্রমণের সংখ্যা নাকি নিম্নতম। তাঁর দাবি, রাজৌরির মতো একটিমাত্র ঘটনা দিয়ে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি বিচার করা যাবে না। যুক্তিটি শুনে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, মন্ত্রী আসলে বলতে চান, ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপের যে সিদ্ধান্ত, তার ফলে পরিস্থিতি মোটেই আগের চেয়ে খারাপ হয়নি, বরং ভাল হয়েছে। প্রশ্ন একটাই, এটাই যদি বাস্তব, তা হলে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা করতে হচ্ছে কেন? কে দেবে এর উত্তর?

উত্তরটা দিতে পারেন অনেকেই। কেননা, সাধারণ চোখে যেটুকু তথ্য-প্রমাণ মেলে, তাতেই দেখা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রদত্ত বক্তব্য ঘটনার তুলনায় অসমঞ্জস। তথ্য বলছে, অন্তত এক বিশেষ ধরনের মিলিট্যান্সি বা জঙ্গি উপদ্রব গত কিছু কাল ধরে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে আগের চেয়ে সংখ্যায় ও তীব্রতায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে, যাকে বলা হয় টার্গেটেড কিলিং, কিংবা পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ কাউকে হত্যার প্রয়াস। কাশ্মীরি হিন্দুদের বেছে বেছে নিধন করার যে ধারা এখন শুরু হয়েছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে তার এই প্রকোপ দেখা যায়নি। কারণ হিসাবে দু’টি কথা বলা যেতে পারে। প্রথমত, ১৯৯০-এর সেই ঐতিহাসিক পণ্ডিতনিধন পর্বের পর যে-হেতু হিন্দু পণ্ডিতদের এক বড় অংশ এই অঞ্চল ত্যাগ করেছিলেন, এবং এই ঘটনাকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হইচই শুরু হয়েছিল, সরাসরি হিন্দুনিধনের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের যে কৃত্রিম প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে সব পক্ষেই ক্ষোভ দানা বাধছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতি প্রমাণ করতে বিজেপি সরকার এতই ব্যগ্র যে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের টোপ হিসাবে ‘ব্যবহার’ করা হচ্ছে, এমনও একটা অভিযোগ তৈরি হয়েছে। এক দিকে পণ্ডিতদের নিরাপত্তা নেই, একের পর এক অপহরণ, আক্রমণ বা নিধনের ঘটনায় তাঁরা জর্জরিত, স্বাভাবিক জীবনযাপনে অপারগ। উল্টো দিকে, এই অনবরত জঙ্গি হামলার জন্য উপত্যকার মুসলমান বাসিন্দারাও অসহায় ও অনিরাপদ বোধ করছেন। সন্দেহ নেই, ৩৭০ ধারা রদ ও তৎসংক্রান্ত ব্যাপক নজরদারি ও অমানবিক কড়াকড়ির কারণে কাশ্মীরি জনগণের মধ্যে উষ্মাস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে, এবং সংঘর্ষও বহুলাংশে বেড়ে যায়। পূর্ব ইতিহাস বলছে, কাশ্মীরে বন্দুকের গুলির সাহায্যে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য, বরং তাতে অশান্তি, সংঘর্ষ ও জনতার জঙ্গি-সমর্থন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার আরও একটি প্রত্যক্ষ কারণ থাকতে পারে। এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীর দুই অঞ্চলেরই হিন্দু ভোট সংগঠিত করার প্রয়াস নিয়েছে বিজেপি সরকার। এমন ভাবে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলির সীমা পুনর্নির্ধারিত হচ্ছে যাতে ‘হিন্দু’ আসনসংখ্যা বাড়ে, এবং হিন্দু ভোটারসংখ্যাও বাড়ে। ভোটে বিজেপির জয়ের মাধ্যমে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা যাবে, এটাই নরেন্দ্র মোদী সরকারের আশা। অবশ্য সংশয় থেকেই যায়। এই প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে উগ্রবাদ যদি বাড়ে, এবং উপত্যকার ক্ষোভ যদি সেই উগ্রবাদে ইন্ধন দেয়, তবে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রকল্পটি সফল হবে কি? বলা কঠিন।

Jammu and Kashmir Amit Shah Terrorist Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy