Advertisement
০৩ মে ২০২৪
CoWin App

অসুরক্ষিত

এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে চলেছে। অথচ, উপযুক্ত সরকারি নীতি কিংবা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত আইনি কাঠামোটি শক্তপোক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে না।

coWIN.

তথ্য ফাঁসের অভিযোগে বিদ্ধ ভারত সরকারের প্রযত্নে আর একটি প্রকল্প: কো-উইন অ্যাপ। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

কেবল অধিকার নয়, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করতে হবে, রায় দিয়েছিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ছ’বছর আগের কথা। সে বারে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের বিরুদ্ধে প্রাক্তন বিচারপতি কে এস পুট্টাস্বামীর দায়ের করা মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ন’জন বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। আবার তথ্য ফাঁসের অভিযোগে বিদ্ধ এখন ভারত সরকারের প্রযত্নে আর একটি প্রকল্প: কো-উইন অ্যাপ। ওই পোর্টালে রাখা একশো কোটির বেশি করোনার টিকাগ্রহণকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা। ২০২১ সালের জুনেও এক দল হ্যাকারের দাবি ছিল, সেই সময়ে পোর্টালে সংগৃহীত পনেরো কোটির বেশি ভারতীয়ের তথ্য তাদের মুঠোয়। কো-উইন’এর তথ্য শুধু আরোগ্য সেতু বা উমঙ্গ অ্যাপ নয়, ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন-এর সঙ্গেও যুক্ত করা আছে। এই প্রসঙ্গে গত কয়েক বছরে অনেক তথ্য ফাঁসের অভিযোগ স্মরণীয়, যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম ঘটনা গত বছরের অগস্টে সরকারি সংস্থা এমপ্লয়িজ়’ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজ়েশন-এর তথ্য চুরি। এর আগে রেলের টিকিট কাটার অ্যাপের তথ্যও ফাঁস হয়েছে। সুতরাং বর্তমান ঘটনাটিকে আলাদা করে দেখা যাবে না। দেশের ডিজিটাল গণ-পরিকাঠামোর (ডিপিআই) ধারাবাহিক দুর্বলতারই ইঙ্গিতবাহী এই ঘটনা।

এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে চলেছে। অথচ, উপযুক্ত সরকারি নীতি কিংবা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত আইনি কাঠামোটি শক্তপোক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে না। ২০১৯ সালে জনমত যাচাইয়ের জন্য জাতীয় সাইবার সুরক্ষা পরিকল্পনা-র যে খসড়া তৈরি হয়েছিল, তা এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়নি। তা ছাড়া, ২০১৩ সালের পর থেকে দেশের সাইবার সুরক্ষা নীতির তথ্যেরও আধুনিকীকরণ হয়নি। এমনকি, প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল, ২০২২’-এর খসড়াও এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোনও সরকারি সংস্থা এর আওতায় না পড়ে। ফলে, এই ধরনের দায়বদ্ধতার অভাব নাগরিকদের ঠেলে দিচ্ছে এমন এক পরিস্থিতির দিকে যেখানে তথ্য সংগ্রহ, আদানপ্রদানের মতো বিষয়গুলি সম্পন্ন হচ্ছে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল রক্ষাকবচ এবং আইনি সুরক্ষা ছাড়াই। সাইবার অপরাধের কবলে পড়ার ঝুঁকি ডিজিটাল পরিষেবার প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করছে, আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যপরিষেবার ক্ষেত্রে এই বিশ্বাসের অভাব বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বরাবরই সমস্যার সমাধানের বদলে তা ধামাচাপা দিতে উদ্‌গ্রীব। সংশ্লিষ্ট পোর্টাল বা অ্যাপের নির্মাতাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য জনসমক্ষে আসে না। এমনকি কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, যারা এই ধরনের ঘটনার অনুসন্ধান করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্ত সম্পর্কে তারাও নীরব। বর্তমান ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাখ্যা— সারা বিশ্বে সর্বাধিক টিকাকরণের সাফল্যকে খর্ব করতেই পরিকল্পিত ভাবে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। সরকার হয়তো বোঝে না, বার বার অন্যের দিকে আঙুল তুললে আঙুলের বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CoWin App Data Breach India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE