Advertisement
০২ মে ২০২৪
Narendra Modi

গোপন কথাটি

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বস্তুটি রসিকতার নয়— যদিও দীর্ঘ দিন ধরেই সমাজমাধ্যমে তা নিয়ে বিস্তর রঙ্গব্যঙ্গ হয়ে এসেছে।

Picture of PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৬
Share: Save:

আরও এক বার তথ্যের অধিকার আইনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি সংক্রান্ত নথি প্রকাশের আবেদন নাকচ হয়ে গেল। ২০১৬ সালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের একটি মন্তব্যের ভিত্তিতে তৎকালীন মুখ্য তথ্য কমিশনার এম শ্রীধর আচার্যুলু গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাত হাই কোর্ট নির্দেশটি নাকচ করে আবেদনকারী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ২৫,০০০ টাকা জরিমানাও করল। ইতিপূর্বে আর একটি আবেদনের ভিত্তিতে তথ্য কমিশন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে বলেছিল— সেই আবেদনটিও দিল্লি হাই কোর্টে খারিজ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে আর এক জন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ১৯৭৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এক্সটার্নাল’ পরীক্ষার্থীদের তালিকায় কি ‘নরেন্দ্র মোদী’ নামে কেউ ছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয় সেই তথ্যটিও দিতে অস্বীকার করে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বস্তুটি রসিকতার নয়— যদিও দীর্ঘ দিন ধরেই সমাজমাধ্যমে তা নিয়ে বিস্তর রঙ্গব্যঙ্গ হয়ে এসেছে। তিনি ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন, না কি তিনি ইঞ্জিনিয়ার, না কি তাঁর কোনও উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই— কোনওটিই নেতা হিসাবে, অথবা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না। ভারতীয় সংবিধান সরকারের সর্বোচ্চ পদটির জন্যও কোনও শিক্ষাগত চৌকাঠের কথা বলেনি— প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব যাতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পূর্ণ যোগদানের পথে বাধা হয়ে উঠতে না পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। শিক্ষাগত ডিগ্রি না থাকাটা দোষের নয়, কিন্তু সে বিষয়ে অসত্য বা অস্বচ্ছতা কখনওই বিধেয় হতে পারে না। পিএমও-র ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পাশ করার কথা লেখা রয়েছে। ২০১৬ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর এম এ পরীক্ষার ফলাফলের কথা ঘোষণাও করেন। কিন্তু সেই মার্কশিট বা ডিগ্রির শংসাপত্র আবেদনকারী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের হাতে পৌঁছয়নি, এমনকি জনসমক্ষেও আসেনি। সেই ডিগ্রি সম্পর্কে যখন এমন বিপুল সংশয় তৈরি হয়েছে, তথ্য প্রকাশ করে সেই সংশয় নিরসন করাই কি প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ছিল না? এমন তো নয় যে, তাঁর ডিগ্রি সম্বন্ধে তথ্য প্রকাশিত হলে তাতে দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি হবে, অথবা ঘনিয়ে আসবে কোনও অদৃষ্টপূর্ব বিপদ! এই গোপনীয়তা রক্ষার অত্যুগ্র প্রচেষ্টা বরং অন্য এক সংশয়ের জন্ম দিতে পারে— তা হলে কি কোনও গোলমাল আছে? এই মুহূর্তে যাবতীয় তথ্য জনসমক্ষে এনে সেই সংশয়কে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণ করাই কি উচিত নয়?

গুজরাত হাই কোর্টের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা পোষণ করেও কয়েকটি প্রশ্ন এখানে উত্থাপন করা প্রয়োজন। প্রথমত, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, মুখ্য তথ্য কমিশনার নেহাতই প্রসঙ্গক্রমে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের আদেশ দিয়েছিলেন, তবুও বৃহত্তর জনস্বার্থে কি সেই আদেশটি বজায় রাখাই বিধেয় ছিল না? যে তথ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্বন্ধে নাগরিকের সন্দেহ নিরসন করতে পারে, সেই তথ্য গোপন রাখা ঠিক কেন এবং কতখানি প্রয়োজন? দ্বিতীয়ত, আবেদনকারী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে জরিমানা করার সিদ্ধান্তটিকেও কেউ এমন ভাবে পাঠ করতে পারেন যে, অতঃপর কেউ প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করলে তাঁর শাস্তি হবে। এই বার্তাটি ভারতীয় গণতন্ত্রের ধর্মের বিপ্রতীপ কি না, সে কথাও কি বিচার করার প্রয়োজন ছিল না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Prime Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE