Advertisement
০২ মে ২০২৪
Anti-Ragging Helpline Number

আশ্বাসে মেলায় বস্তু?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় র‌্যাগিং-বিরোধী চব্বিশ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর চালুর কথা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে নম্বরটি চালুও হয়ে গিয়েছে।

ragging.

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১৯
Share: Save:

বোধোদয় ঘটল, তবে বহু বিলম্বে, প্রাণের বিনিময়ে। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় র‌্যাগিং-বিরোধী চব্বিশ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর চালুর কথা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে নম্বরটি চালুও হয়ে গিয়েছে। এই পদক্ষেপ অতীব জরুরি। র‌্যাগিং কোনও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সমস্যা নয়, দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে এর শিকার— এই কথা প্রশাসনের অজ্ঞাত ছিল না। সমস্ত স্তর থেকে এ-হেন ‘অপরাধ’ দূর করতে যে সরকারের তরফে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন, সেই দাবিও বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। অথচ, অতীতে কোনও সরকারই শক্ত হাতে তা বন্ধ করার বিষয়ে উদ্‌গ্রীব হয়নি। গুরুতর কোনও ঘটনার পরে যেটুকু প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছে, তা প্রাথমিক স্তরের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। এর সুযোগেই র‌্যাগিং-রোগ আরও গভীরে তার ডালপালা মেলেছে। যাদবপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা না ঘটলে হয়তো আরও বেশ কিছু কাল এমনই চলত, ভবিষ্যতেও হয়তো চলবে। তবু, প্রশাসন যে নড়েচড়ে বসল একটি সুনির্দিষ্ট ভাবনা নিয়ে, এটাও এই মুহূর্তের বড় পাওনা।

তবে, কোনও উদ্যোগের সাফল্য শুধুমাত্র তার ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। পরিস্থিতি বিচারে সেটি কী ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে। পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইতিহাস ‘ভাল নয়’ বললে কম বলা হয়, তা আসলে অত্যন্ত নিম্নমানের। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার নিরাময়-কল্পে, দুর্গত-নিপীড়িতদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে ঘটা করে একাধিক হেল্পলাইন চালু হওয়া সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের মুহূর্তে সেগুলি কাজে আসেনি। সমস্যার সমাধান তো দূর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কথা বলার মতো কাউকেও পাওয়া যায়নি। বিপদের সময় ১০০ ডায়াল করে সাহায্য মেলেনি, এমন অভিযোগও তো কম নয়। একই অভিযোগ উঠেছে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পুনর্বাসনের হেল্পলাইন নম্বর নিয়েও। কোথাও সেই পরিষেবা চলছে অদক্ষ কর্মীদের দিয়ে, কোথাও দিন-রাত হেল্পলাইন চালু থাকার কথা হলেও ছুটির দিনে সেগুলি অকেজো হয়ে থাকে। অথচ, হেল্পলাইন চালু করার সঙ্গে তার আনুষঙ্গিক কাঠামোটিও তৈরি রাখা একান্ত জরুরি। যিনি ফোন ধরবেন, তিনি সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তা পাঠিয়ে দেবেন, এবং সেই বিভাগ অতি দ্রুত ব্যবস্থা করবে— এমনটাই নিয়ম। এর জন্য বিভাগগুলির কাজের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সেই নিয়ম যথাযথ ভাবে পালিত হয় কতটুকু?

উপরন্তু হেল্পলাইনের অস্তিত্ব সম্পর্কেই জনসাধারণের এক বিরাট অংশ অজ্ঞাত থাকেন, এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারের অভাবে। এ দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ এখনও ইন্টারনেট ব্যবহারে সড়গড় নন। কোন সমস্যায় কোন হেল্পলাইনের দ্বারস্থ হতে হবে, সে বিষয়ে তাঁরা জানতে পারেন না। র‌্যাগিং-এর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র হেল্পলাইন চালু করাই যথেষ্ট নয়, এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা নিয়ে নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায়, ঘোষণাটুকুই সার হবে, র‌্যাগিং-এর ভয়ানক রোগ আগের নিয়মেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Death Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE