Advertisement
E-Paper

সদর্থক

যেখানে দলে ঢুকিবার দরজাই খুলিত না, সেখানে এখন নিলামে বিক্রি হইয়া বিভিন্ন স্তরের প্রতিভার খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ ও অর্থ, দুই-ই সুলভ।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:২৭

যাঁহার ‘বেস প্রাইস’ ছিল দুই কোটি, ছয় গুণেরও বেশি দামে তাঁহাকে কিনিতেছে কোনও দল। এই বৎসরের আইপিএল নিলাম সম্প্রতি হইয়া গেল। প্রতি বৎসরই এমন চিত্র দৃষ্ট হয়— তথাকথিত অখ্যাত বা অপরিচিত কেহ রাতারাতি কোটিপতি বনিয়া যান, দামি কোনও খেলোয়াড় নিলামের ডাকাডাকিতে ক্রমশ দুর্মূল্য হইতে থাকেন। আইপিএল-এর নিলাম এই ভাবেই যুবরাজ সিংহের ক্রয়মূল্য ষোলো কোটি, দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসের ক্রয়মূল্য রেকর্ড ষোলো কোটি পঁচিশ লক্ষে উঠিতে দেখিয়াছে। এই বৎসরও ব্যতিক্রম নহে, ঈশান কিশানকে মুম্বই কিনিয়াছে পনেরো কোটিরও অধিক টাকা গনিয়া, বারো কোটি পঁচিশ লক্ষে কলিকাতা দলে আসিয়াছেন শ্রেয়স আয়ার।

আইপিএল-এর নিলামে খেলোয়াড়দের ‘পণ্যায়িত’ করিবার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ, এমন অভিযোগ শুনা যায়। দল তথা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির খেলোয়াড় নির্বাচনের এই পদ্ধতি আদতে যে এক বাজার প্রক্রিয়া, তাহার বহু সদর্থক দিকও বর্তমান, তাঁহারা বুঝেন না। নিলামে ক্রিকেটাররা স্বীয় দক্ষতা লইয়া উপস্থিত; রাজ্য ও আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, চূড়ান্ত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের পাশে অনভিজ্ঞ কিন্তু অতি প্রতিভাবান, সকলেই আছেন। দলগুলি নিজেদের প্রয়োজন, প্রতিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝিয়া তাঁহাদের লইয়া দরাদরি করিতেছে। এগারো জনের দলে কোন ক্রিকেটার প্রতিভার দাম বা খেলিবার সুযোগ পাইবেন, আইপিএল-এর ন্যায় প্রতিযোগিতা আসার পূর্বে তাহা ছিল মুখ্যত নির্বাচক-মুখাপেক্ষী। জাতীয় দলে যেখানে স্থানাভাব ও প্রবল প্রতিযোগিতা, আইপিএল-এর নিলাম সেখানে বিভিন্ন স্তরের ও প্রতিভার খেলোয়াড়দের নিজেদের মেলিয়া ধরিবার এক বিরাট পরিসর দিতেছে। সারা বিশ্ব দেখিতেছে, বৃহৎ বিজ্ঞাপনদাতারা আসিতেছেন, বিপুল অর্থ বরাদ্দ হইতেছে, এই সব কিছুই শুধু ক্রিকেটকেই নহে, ক্রিকেটারদের এক-একটি দলভুক্ত হওয়ার ও প্রতিভা প্রদর্শনের খেলাটিও পাল্টাইয়া দিল। অন্তঃস্থ বার্তাটি ব্যাপকার্থে অর্থনীতি তথা বাজারের অনুসৃত নীতি: দক্ষতা থাকিলে তাহার দর মিলিবে। তাৎক্ষণিক বা সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা পরিস্থিতি কতকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে সত্য, কিন্তু দক্ষতা অনুযায়ী যে খেলোয়াড়ের যা দাম পাওয়ার কথা, আইপিএল-এর নিলাম তাহা নিশ্চিত করিতেছে।

দক্ষতারও স্তরভেদ আছে। বিরাট কোহলি আর ঋষভ পন্থে, প্যাট কামিন্স ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের মধ্যে ম্যাচ জিতাইবার সামর্থ্যে ফারাক অস্বীকার করিবার নহে। কিন্তু পূর্বে একটি জাতীয় বা রাজ্য দলে চূড়ান্ত একাদশে কেবল হাতে গোনা সেরা খেলোয়াড়রাই সুযোগ পাইতেন; আইপিএল-নিলামের সূত্রে সেখানে দশটি দলে নানা মানের ও অনেক বেশি সংখ্যার ক্রিকেটপ্রতিভা সুযোগ পাইতেছেন। প্রতিভার তারতম্যে দামও হয়তো কমবেশি হইবে, কিন্তু পূর্বাবস্থায় যেখানে দলে ঢুকিবার দরজাই খুলিত না, সেখানে এখন নিলামে বিক্রি হইয়া বিভিন্ন স্তরের প্রতিভার খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ ও অর্থ, দুই-ই সুলভ। সুস্থ প্রতিযোগিতা-আবহে খেলোয়াড়দের ক্রীড়াপ্রতিভার উত্তরণও ঘটিতেছে, তাহাতে জাতীয় দলেরও লাভ, আইপিএল-সফল বহু ক্রিকেটারের জাতীয় দলভুক্তিই তাহার প্রমাণ। নিলামকে স্রেফ ‘বাজারি’ বলিয়া উড়াইয়া দিলে এই বৃহত্তর ও সদর্থক চিত্রটিকে অস্বীকার করা হয়।

1

IPL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy