Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

নির্যাতনের রং

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় যে অতি-রাজনীতির ছাপ রহিয়াছে, অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা তাহারই পরিণাম।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

কোনও অবস্থাতেই নারী নির্যাতন বরদাস্ত করা হইবে না। নির্যাতনের অভিযোগ মিলিলে রাজনীতির রং না দেখিয়াই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা করিতে হইবে— সম্প্রতি পুলিশের কর্তাদের প্রতি এইরূপ নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান যখন নারী নির্যাতনের বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেন, তখন তাহা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হইয়া উঠে। কারণ ইহা সত্য যে, নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাইলেও বহু ক্ষেত্রেই তদন্ত চলে ঢিমাতেতালায়। গ্রামাঞ্চলে বা প্রত্যন্ত এলাকায় এই প্রবণতা প্রকটতর। এবং, বহু নারী নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ থানা অবধি পৌঁছাইতেই পারে না। পুলিশি অসহযোগিতার আশঙ্কায় নির্যাতিত মহিলারা আর থানায় যান না। অনেক ক্ষেত্রে সুবিচারের আশায় মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হইতে হয়। কোনও শাসনেই এই চিত্রের বিশেষ পরিবর্তন হয় নাই। অতএব, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা তাৎপর্যবাহী বইকি।

তবে, মুখ্যমন্ত্রীও বিলক্ষণ জানিবেন যে, পুলিশের গড়িমসির পিছনে রাজনৈতিক চাপের ভূমিকা প্রবল। এই চাপ সৃষ্টির অভিযোগ সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধেই উঠিয়া থাকে। নির্যাতনের অভিযোগ উঠিলে অপরাধী সচরাচর রাজনৈতিক ছত্রছায়াতেই মুক্তির পথ খুঁজিতে থাকে। তাহার বিরুদ্ধে তখন পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলে না। প্রমাণ মিলিলেও বহু ক্ষেত্রেই পুলিশ অপরাধীকে ‘খুঁজিয়া পায় না’— অপরাধী পুলিশের নাকের ডগায় বসিয়া থাকিলেও নহে। অবশ্য শুধু নারী নির্যাতন নহে, যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রেই ইহাই দস্তুর। এমন নহে যে, ইহা এই জমানার বৈশিষ্ট্য। যে দল যখন ক্ষমতায় আসিয়াছে, তাহার বিরুদ্ধেই স্থানীয় স্তরে অপরাধীদের প্রশ্রয় দিবার এবং পরিণামে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠিয়াছে। শুধুমাত্র এই রাজ্য নহে, পশ্চিমবঙ্গের বাহিরেও একই চিত্র। নারী নির্যাতনের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ নিয়মিত সংবাদ শিরোনামে জায়গা করিয়া লইতেছে। সেই রাজ্যে হাথরস-কাণ্ড প্রমাণ করিয়াছে, পুরুষতন্ত্র-চালিত রাজনীতি কী ভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।

বস্তুত, ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় যে অতি-রাজনীতির ছাপ রহিয়াছে, অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা তাহারই পরিণাম। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহাতে ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছেন তুলনায় দুর্বল, প্রান্তিক মানুষ— নারীদের যে তালিকাভুক্ত না করিয়া উপায় নাই। অথচ, ভারতের নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আইন আছে। সেই আইনকেই যদি যথাযথ এবং চাপমুক্ত ভাবে প্রয়োগ করা যাইত, তাহা হইলে হয়তো নির্যাতনের চিত্রটি এত বিবর্ণ হইত না। পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের অভিযোগ জানাইবার জন্য জেলায় মহিলা থানা স্থাপিত হইয়াছিল। কিন্তু তাহাতেও যে বিশেষ লাভ হইয়াছে, এমনটা নহে। ঘটনা হইল, নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করিবার মধ্যে— এমনকি নির্যাতিতা হইবার কথা প্রকাশ করিবার মধ্যেও— এখনও কিছু সামাজিক লজ্জা রহিয়াছে। সমাজ কী ভাবে তাহার দেখার চোখ ও ভাবিবার মন পাল্টাইবে, তাহা বৃহত্তর প্রশ্ন। কিন্তু, পুলিশ-প্রশাসন যদি নির্যাতিতার সহায় হয়, যদি অপরাধীকে নির্দ্বিধায় ‘অপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করে, তবে তাহা ক্রমে সমাজের মনকেও পাল্টাইয়া দিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE