E-Paper

গুরুত্বহীন

মেয়েদের জীবনে এলপিজি-র গুরুত্ব কতখানি, অন্তত তাত্ত্বিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সে কথাটি জানা বলেই মনে হয়।

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৪:৪১
A Photograph of Gas Cylinders

নির্বাচনের ফল  প্রকাশ আর সিলিন্ডারপ্রতি পঞ্চাশ টাকা মূল্যবৃদ্ধি, দু’টি ঘটনা পাকেচক্রে একই সঙ্গে ঘটল। ফাইল ছবি।

হয়তো নেহাতই সমাপতন। হয়তো উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যে নির্বাচনপর্বের সমাপ্তির সঙ্গে এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্যবৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই— ফল প্রকাশ আর সিলিন্ডারপ্রতি পঞ্চাশ টাকা মূল্যবৃদ্ধি, দু’টি ঘটনা পাকেচক্রে একই সঙ্গে ঘটল। তবে, নির্বাচন এলেই পেট্রল-ডিজ়েল বা গ্যাসের দাম যে ভাবে বারে বারেই থমকে যায়, এবং নির্বাচনপর্ব মিটলেই তা এক লাফে অনেকখানি বাড়ে, তাতে কারও সন্দেহ হতে পারে যে, এ-হেন সমাপতনের পিছনে নির্ঘাত ঐশী অঙ্গুলিহেলন রয়েছে। সেই ক্ষমতা এমন, যাতে জ্বালানি তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে এলপিজি-র দাম না বাড়ার কারণে হওয়া ক্ষতি মেটাতে ২০,০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। এখানে একটি কথা স্পষ্ট বলা প্রয়োজন— এলিপিজি-র যে পজ়িটিভ এক্সটার্নালিটি বা ইতিবাচক অতিক্রিয়া রয়েছে, বিশেষত নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে, তার জন্য ভর্তুকি দেওয়া দরকার হলে তা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু, সম্পূর্ণ যুক্তিক্রমটি যদি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়, তবে সেই অস্বচ্ছতার দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করা বিধেয়।

মেয়েদের জীবনে এলপিজি-র গুরুত্ব কতখানি, অন্তত তাত্ত্বিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সে কথাটি জানা বলেই মনে হয়। এই বাজেটেও অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও অবধি ৯.৬ কোটি পরিবারকে উজ্জ্বলা যোজনার অধীনে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তাঁরা আদৌ এলপিজি ব্যবহার করতে পারেন কি না, সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ঢোকে না। সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যাচ্ছে, উজ্জ্বলা যোজনায় সংযোগ পেয়েছেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এমন পরিবারগুলির ১১.৩% মাত্র এক বার নতুন সিলিন্ডার নিয়েছেন, এবং ৫৬.৪% পরিবার চারটি বা তার কম নতুন সিলিন্ডার নিয়েছেন। অর্থাৎ, বাড়িতে এলপিজি সংযোগ থাকলেও তাঁরা পুরনো পদ্ধতিতে, অর্থাৎ কাঠকুটো জ্বালিয়ে রান্না করছেন। কেন, সেই কারণটি সহজবোধ্য— উজ্জ্বলা যোজনার উপভোক্তাদের জন্য সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি ২০০ টাকা মাত্র। কলকাতায় এখন একটি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১২৯ টাকা। গ্যাসের পিছনে মাসে ৯২৯ টাকা খরচ করার সামর্থ্য অধিকাংশ পরিবারেরই নেই, ফলে পুরনো পদ্ধতিই ভরসা।

এলপিজি-র ভর্তুকির ছবিটা কেমন দাঁড়াল, এ বছরের বাজেট থেকে তা বোঝা সম্ভব। গত বাজেটে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে এই খাতে ভর্তুকিবাবদ বরাদ্দ হয়েছিল ৪০০০ কোটি টাকা। সংশোধিত হিসাবে দেখা গেল, খরচ করা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা— অর্থাৎ, বরাদ্দের সাড়ে চার শতাংশ! এই বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ওই ১৮০ কোটি টাকাই। গত বছরের সংশোধিত হিসাব বলছে, নতুন সংযোগ দিতে খরচ হয়েছে ৮১০০ কোটি টাকা। এ বছর সে খাতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র এক লক্ষ টাকা। ভোটের খাতিরে গ্যাসের দাম চেপে রেখে তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দিলে সব উপভোক্তাই সেই ভর্তুকি পান— এবং, সিলিন্ডারের দাম বেশি হওয়ায় যে-হেতু গরিব বা নিম্নমধ্যবিত্তের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্নরাই বেশি সিলিন্ডার কেনেন, ফলে তাঁদের ভাগেই ভর্তুকি পড়ে বেশি। সেই টাকাটি উজ্জ্বলা যোজনায় সরাসরি ভর্তুকিদিলে গরিব মানুষের লাভ হত। কিন্তু, সরকারের কাছে সম্ভবত সে লাভ গুরুত্বহীন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

cooking gas LPG Price Hike

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy