E-Paper

পরাজিত

রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতা হারিয়ে, এবং মধ্যপ্রদেশে আরও এক বার পরাজিত হয়ে কংগ্রেস ফের ‘ইন্ডিয়া’-য় মন দিতে চাইছে। প্রশ্ন হল, দেশের বিজেপি-বিরোধী ভোটাররা কোন ভরসায় কংগ্রেসকে বিশ্বাস করবেন?

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৬
An image of Congress Flags

—প্রতীকী চিত্র।

ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে কয়েকটি কথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত— এক, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য বিজেপির কাছে দাক্ষিণাত্য আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়, উত্তর ভারতের ভোটেই নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে তৃতীয় বার সরকার গঠন করা সম্ভব; দুই, তেলঙ্গানায় বিজেপি আদৌ হারেনি, বরং রাজ্যে কার্যত অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে তাদের বিধায়কের সংখ্যা ও প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত উভয়ই বেড়েছে; তিন, জাতিভিত্তিক জনশুমারি না করানোই হোক বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাঙাততন্ত্র পোষণের অভিযোগ, কিছুই ভোটারদের কাছে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ বলে বিবেচিত হয়নি; চার, কট্টর হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে নরম হিন্দুত্বের অস্ত্রে জয়লাভ অসম্ভব; এবং পাঁচ, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব নামক বহু পুরাতন ব্যাধিটির পাকাপোক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল গান্ধীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন হল, এর মধ্যে কোন কথাটি জানার জন্য এত দিন অবধি অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল? মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ যে ভঙ্গিতে দলীয় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে জনসমক্ষেই বিষ উগরে দিচ্ছিলেন, অথবা রাজস্থানে অশোক গহলৌত আর সচিন পাইলট যে ভঙ্গিতে একে অপরের যাত্রাভঙ্গ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তা ভোটারদের কাছে যে এক মজবুত সুসংহত দলের ছবি তুলে ধরে না, হাই কম্যান্ড তা বুঝতে না পারলে তার উপরে আর কথা চলে না। কংগ্রেসের নেতারা যখন বাবরি মসজিদ ভাঙার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করেছেন, অথবা রাম বন গমনপথ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তখন কি তাঁদের মনে পড়েনি যে, স্বয়ং রাহুল গান্ধী এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে মাথা ঠুকেও বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে টোল ফেলতে পারেননি? যাঁরা হিন্দুত্ব কিনতে চান, তাঁরা আসল জিনিস ফেলে ভেজালে আকৃষ্ট হবেন কেন, এই প্রশ্নটা কংগ্রেস নেতারা নিজেদের করে দেখতে পারেন।

কর্নাটকে জয় কংগ্রেসকে সম্ভবত অতি আত্মতু্ষ্ট করে তুলেছিল। সম্প্রতি বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরের যে রাজ্যগুলিতে নির্বাচন আয়োজিত হল, দেশের মধ্যে সেই রাজ্যগুলিতেই এত দিন অবধি কংগ্রেস একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব পেত। সম্ভবত সেই কারণেই এই নির্বাচনপর্বের আগে ‘ইন্ডিয়া’ জোট নিয়ে কংগ্রেস তেমন তৎপরতা দেখায়নি— আশা ছিল, অন্তত দু’টি রাজ্যে সরকার গড়তে পারলে জোটে রাজনৈতিক দরকষাকষিতে সুবিধা হবে। রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতা হারিয়ে, এবং মধ্যপ্রদেশে আরও এক বার পরাজিত হয়ে কংগ্রেস ফের ‘ইন্ডিয়া’-য় মন দিতে চাইছে। প্রশ্ন হল, দেশের বিজেপি-বিরোধী ভোটাররা কোন ভরসায় কংগ্রেসকে বিশ্বাস করবেন? যে দল জীবন-মরণ সমস্যাতেও অন্তর্দ্বন্দ্ব ছাড়তে পারে না, কোনও রাজনৈতিক প্রশ্নকেই ভোটের অস্ত্র করে তুলতে পারে না, নরেন্দ্র মোদীর জয়রথের সামনে যে দল প্রতিরোধই তৈরি করতে পারে না, ভোটাররা তাদের উপরে আস্থা রাখবে কেন?

‘ইন্ডিয়া’ জোটেও স্বভাবতই প্রশ্নগুলি উঠছে। কংগ্রেসের নেতৃত্ব মানতে কার্যত সব শরিকেরই কম-বেশি আপত্তি ছিল— বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সেই আপত্তিকে মান্যতা দিল। কিন্তু, শরিকরাও নিজেদের দিকে তাকাতে পারেন। লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। বিজেপি যা চেয়েছিল, সে লক্ষ্যে তারা অবিচল— এক দিকে জি২০-র মঞ্চ ব্যবহার করে দেশের এক বড় অংশের মানুষের মনে নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অন্য দিকে জানুয়ারিতে রামমন্দিরের উদ্বোধন। বেহাল অর্থনীতি, কূটনৈতিক স্তরে বিবিধ ব্যর্থতা, প্রকট সাঙাততন্ত্র— কোনও কিছুই বিজেপির পথে বাধা হয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ‘ইন্ডিয়া’-র অন্য শরিক দলগুলিই বা নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে কোথায়? লড়াই শুরু হওয়ার আগেই বিরোধীরা পরাজয় মেনে নিয়েছে, এমন বার্তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পক্ষে শুভ হতে পারে না। ‘ইন্ডিয়া’ জোট গড়ার আগেই ভেঙে পড়লে তার দায় একা কংগ্রেসের হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress Lok Sabha Election 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy