E-Paper

মৃত্যুফাঁদ

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এ রাজ্যে বিদ্যুৎবাহী তারকে ‘মরসুমি বিপদ’ হিসাবে দেখা হয়। বর্ষার সময়ে এর বিপদ বিবেচিত হলেও বাকি সময়ে তা থেকে যায় অগোচরেই।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৪:৫৪
An image of an old house

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যেমন— একবালপুর থানা এলাকায় বাড়ির সামনে থাকা লোহার তারে কাপড় মেলতে গিয়ে এক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরই পরিবারের দু’জন। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের তারের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। ওই একই দিনে বীরভূমের সদাইপুরে রাস্তার ধারের নিচু উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তারের সংস্পর্শে প্রাণ গিয়েছে দুই ভিন্‌রাজ্যের শ্রমিকের। অভিযোগ, বিপদের আশঙ্কা করেই ওই তার উঁচুতে তোলার আবেদন করা হয় বিদ্যুৎ দফতরের কাছে। কিন্তু সেই অনুরোধে কর্ণপাত করা হয়নি। তবে ঝড়বৃষ্টির কারণেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। যেমন— হাওড়ায় ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুৎবাহী তারে পা জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। এই মৃত্যুগুলি যেমন মর্মান্তিক, তেমনই অকারণ। প্রতিটি ঘটনাতেই স্পষ্ট যে, প্রশাসন যদি তৎপর হত, তা হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

একবালপুরের ঘটনার পরে বিদ্যুৎ চুরির বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতা বলে, এমন মর্মান্তিক প্রাণহানির পরে প্রতি বারই প্রশাসন নড়চড়ে বসে। আরোপ-প্রত্যারোপের পর্ব চলে। উপযুক্ত নীতি প্রণয়নেরও চলে মহড়া। কিন্তু শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি অপরিবর্তিতই থেকে যায়। মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত তারের জট থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি এই মহানগর তথা রাজ্য। বৃষ্টির জল সেখানে তারের স্তূপ বেয়ে মিটার ঘরে ঢুকে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়, যা নিয়ন্ত্রণ করা ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ঝড়বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে পড়লে বা তারের জট নিয়ে গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙলে বাড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা। হাওড়ার কিশোরীর মৃত্যু যার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রতি বর্ষায় ছেঁড়া তারে কিংবা জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু এখন এ রাজ্যের পরিচিত চিত্র। একুশ শতকে কোনও মহানগরে যে এখনও ওভারহেড বিদ্যুতের তার ঝোলে, সেটাই যথেষ্ট আশ্চর্যের। বহু জায়গায় টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগের তারও বিদ্যুতের তার, বাতিস্তম্ভ বা পরিকাঠামো আশ্রয় করে বিস্তৃত। সেগুলিই বা পাতালপ্রবিষ্ট হবে না কেন, উত্তর মেলে না। একবালপুরের ঘটনাটির সঙ্গে আবার অবৈধ নির্মাণ এবং সেই সূত্রে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের যোগ পাওয়া গিয়েছে। বিদ্যুৎ চুরি এ রাজ্যের বহুকালের সমস্যা। তা সত্ত্বেও সমাধান সম্ভব হয়নি।

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এ রাজ্যে বিদ্যুৎবাহী তারকে ‘মরসুমি বিপদ’ হিসাবে দেখা হয়। বর্ষার সময়ে এর বিপদ বিবেচিত হলেও বাকি সময়ে তা থেকে যায় অগোচরেই। তা ছাড়া, বহু ক্ষেত্রে সমস্যা জানা থাকলেও সমাধানসূত্র হারিয়ে যায় ‘হচ্ছে হবে’-র চোরাবালিতে। ফলে, কখনও রাস্তায় স্তূপীকৃত নির্মাণসামগ্রীর কারণে, কখনও ছেঁড়া তারে, আবার কখনও অবৈধ ভাবে জমিয়ে রাখা দাহ্য সামগ্রীর কারণে প্রাণ হারান নিরীহ নাগরিক। এই গয়ংগচ্ছ ‘ট্র্যাডিশন’ এ বার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। অবৈধ কার্যকলাপ রোধে প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে। প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। নাগরিকের মৃত্যুর মূল্যে নয়, মৃত্যু রুখতে আগেভাগেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রশাসনের বোধোদয় না হলে এমন ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেই দায় প্রশাসন এড়াতে পারবে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Electrocution Death by Electrocution Electricity Department State Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy