E-Paper

স্বীকৃতির পর

২০১৯ সালে ৫ অগস্ট নরেন্দ্র মোদী সরকারের গৃহীত ঐতিহাসিক পদক্ষেপের এই বৈধতা স্বীকার স্বভাবতই কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি ও তার নেতৃবর্গের কাছে একটি বিরাট জয়।

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Supreme Court.

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করার সিদ্ধান্তটি বৈধ: ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের মত, ওই ধারা ছিল অস্থায়ী, এবং সে-হেতু, ৩৭০ ধারার বন্দোবস্তটি, সাময়িক। যে-হেতু জম্মু ও কাশ্মীরের ‘নিজস্ব সার্বভৌমত্ব’ থাকতে পারে না, তাই ভারতীয় সংবিধান সেখানে কার্যকর করতে অসুবিধা থাকারও কথা নয়— সাময়িক ধারার অবসানে। দেশের অন্তর্গত একটি রাজ্য হিসাবেই একে গণ্য করা যাবে— কেবল শর্ত হল ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতেই হবে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকেও সেই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়েছে। ২০১৯ সালে ৫ অগস্ট নরেন্দ্র মোদী সরকারের গৃহীত ঐতিহাসিক পদক্ষেপের এই বৈধতা স্বীকার স্বভাবতই কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি ও তার নেতৃবর্গের কাছে একটি বিরাট জয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই ঘোষণার নিহিত গুরুত্ব কেবল দলীয় বা সরকারি জয়-পরাজয় নয়, তার থেকে অনেক গভীর। ভারতের স্বাধীনতার সময়ে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নটি যত গুরুতর ও জটিল হয়ে উঠেছিল, গত সাড়ে সাত দশক যাবৎ সেই প্রশ্নের একটি স্বীকৃতি বহমান ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রের কাছে। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বরের পর থেকে প্রশ্নটির সমাপন হল। কেবল বর্তমান বা ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এমনকি অতীতেরও একটি ‘রেট্রস্পেকটিভ’ ব্যাখ্যা এর মধ্যে রইল— কেননা, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে স্পষ্ট ঘোষিত যে, জম্মু ও কাশ্মীর যখন ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল, তখন কোনও ‘এলিমেন্ট অব সভরেনটি’ বা সার্বভৌমত্বের ছায়ামাত্র তার মধ্যে ছিল না। সাড়ে ছিয়াত্তরে এসে স্বাধীন ভারতের পক্ষে এ এক পর্বান্তর: বললে অত্যুক্তি হয় না।

এই রায় অপ্রত্যাশিত নয়, অনিবার্যও সম্ভবত। তার পরও একটি বড় প্রশ্ন থাকে, দেশের শাসনবিভাগের কাছে। এত বড় সাংবিধানিক পরিবর্তন যদি দেশের কোনও অঞ্চলে করতেই হয়, তা কি সাংবিধানিক পদ্ধতিতেই করা বিধেয় নয়? যে ভাবে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা রদ হয়েছিল, এবং যে ভাবে অতিরিক্ত শাসন দিয়ে তার সমস্ত অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়াকে এখনও অবধি চেপে রাখা হয়েছে— তাকে কি যুক্তরাষ্ট্রীয় বা গণতান্ত্রিক বলা চলে? সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে এই প্রশ্নের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পরোক্ষ ভাবেই এই প্রশ্নটির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বিশেষত যখন উক্ত অঞ্চলের মতামত এমন ভাবে অবহেলিত হওয়ায় আঞ্চলিক অধিবাসীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রমাণ যথেষ্টই।

এবং এই প্রসঙ্গেই, ‘সভরেনটি’ বা সার্বভৌমত্বের ধারণাটি যে ভাবে সাম্প্রতিকতম রায়ে আলোচিত হল, তা একটি আলাদা গুরুত্বে অন্বিত হওয়ার কথা। সাংবিধানিক বেঞ্চের মাননীয় বিচারপতি খন্না যেমন বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের ধারাটির মধ্যে আঞ্চলিক সার্বভৌমতার ধারণা ছিল না, তবে একটি ‘অ্যাসিমেট্রিক ফেডারালিজ়ম’ বা অসমবিন্যাসী যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধারণা ছিল। তাঁর ও তাঁদের আশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রীয়তার যে অধিকার ভারতের অন্য রাজ্যের অধিবাসীরা লাভ করেন, তা জম্মু ও কাশ্মীরেও প্রসারিত হবে। কাশ্মীর উপত্যকা অনেক দিন ধরে নানা অস্বাভাবিকতার মধ্যে দিন যাপন করছে, চব্বিশ ঘণ্টার কড়া নজরদারি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে অনিয়মিত পাঠদান, কিংবা ইন্টারনেট যোগাযোগে বাধাদান ২০১৯ সালের পর থেকে সে রাজ্যের প্রাত্যহিক বাস্তব। ভারতীয় অঙ্গরাজ্য হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বীকৃতি বৈধতা পাওয়ার মধ্যে আছে মোদী সরকারের বিপুল জয়। কিন্তু সেই জয় যেন সে রাজ্যে সুশাসনের প্রয়োজনটি ভুলিয়ে না দেয়। অনেক অযথা, অমানবিক, অন্যায্য শৃঙ্খল কাশ্মীরের গায়ে আজও পাকে পাকে জড়ানো। কেন্দ্রীয় সরকারের পুনর্বিবেচনায় সেগুলি মোচনের ব্যবস্থা হোক, এই দাবি রইল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court Article 370 Jammu and Kashmir Abrogation of Article 370

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy