Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Calcutta High Court

সংশোধন

বন্দির মুক্তির আবেদনের বিবেচনা গতানুগতিক করণিকের কাজের ধরনে করলে চলবে না, বলেছিল দিল্লি হাই কোর্ট। এখন কলকাতা হাই কোর্ট সে কথারই পুনরুক্তি করল।

calcutta high court

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৪:৪৯
Share: Save:

দীর্ঘ কারাবাসের পর দণ্ডিত মুক্তির আর্জি করলে, তা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। অপহরণের দায়ে তেইশ বছর কারাবাসের পর বন্দি মুক্তিভিক্ষা করলে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল কারাবাসের মেয়াদ সম্পর্কে পুনর্বিবেচনার জন্য গঠিত পর্ষদ (স্টেট সেনটেন্সিং রিভিউ বোর্ড, সংক্ষেপে এসএসআরবি)। কারণ হিসাবে দর্শানো হয় পুলিশের আপত্তিকে। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ওই বন্দির আবেদন মঞ্জুর করে মন্তব্য করেছেন যে, এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্যই একমাত্র বিবেচ্য হতে পারে না। জেলে বন্দির আচরণ বিষয়ে জেল সুপারের বক্তব্য, সমাজ কল্যাণ দফতরের বক্তব্য, এগুলি বিবেচনা না করেই মুক্তির আর্জি খারিজ করা যায় না। পর্ষদ কারাগারের প্রকৃত সামাজিক ভূমিকা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও যথেষ্ট সচেতন নয়, এমন আক্ষেপও করেছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। তাঁর এই বক্তব্য বস্তুত আধুনিক কারাগারের সংজ্ঞার কথাই ফের মনে করাল রাজ্যকে। অতীতে মনে করা হত, বন্দিদশার কঠোর ও অমানবিক পরিস্থিতির ভয়ে লোকে যাতে অপরাধ না করে, কারাগারের প্রধান কাজ সেটাই নিশ্চিত করা। কিন্তু সারা জগতেই অপরাধ ও বন্দিত্বের ধারণা বদলে গিয়েছে বিংশ শতকে। এখন কারাব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য সংশোধন ও পুনর্বাসন। কারাগারগুলিকে তাই বহু দিনই ‘সংশোধানাগার’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

অতএব কারাদণ্ডের যা প্রধান উদ্দেশ্য, বন্দির অপরাধপ্রবণতা দূর করা এবং বাইরের সমাজে বসবাসের জন্য তাঁকে উপযুক্ত করে তোলা, সে কাজটি হয়ে থাকলে কারাবাস দীর্ঘ করা অর্থহীন। তাতে বন্দির মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, রাজ্যের কারাব্যবস্থার উপরও অযথা চাপ তৈরি হয়। এই বিবেচনার কাজটি করে দেখার জন্যই কারাবাসের মেয়াদ পুনর্বিবেচনার জন্য বিশেষ পর্ষদ, বা এসএসআরবি তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে ২০০০ সালে এই পর্ষদ তৈরি হয়েছিল। চোদ্দো বছর কারাবাসের পরে পর্ষদের কাছে আবেদন করা চলে। আক্ষেপের বিষয়, বিভিন্ন রাজ্যেই দেখা গিয়েছে, মানবিকতার সঙ্গে আবেদনগুলি সার্বিক ভাবে এবং সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে না এসএসআরবি। অনেক সময়ে অনাবশ্যক কঠোরতা দেখানো হয়, যা কারাগারের ভূমিকা বিষয়ে সাবেক মানসিকতার পরিচয় দেয়। এ বিষয়ে পর্ষদ সদস্যদের সতর্ক করেছিলেন দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমান হাইজ্যাকে অভিযুক্ত এক ব্যক্তি উনিশ বছর কারাবাসের পরে মুক্তির আবেদন করেছিল। এসএসআরবি তা খারিজ করে অপরাধের গুরুত্বের যুক্তিতে। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বন্দির স্বাস্থ্য, বয়স, আর্থসামাজিক অবস্থা, পারিবারিক পরিস্থিতি এবং দণ্ডদানের পরে কারাগারে তার আচরণ, এগুলি বিবেচনা না করে, কেবলমাত্র অপরাধের ধরনের ভিত্তিতে তাকে মুক্তির সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করলে, তা ন্যায়ের উদ্দেশ্য সাধিত করে না।

বন্দির মুক্তির আবেদনের বিবেচনা গতানুগতিক করণিকের কাজের ধরনে করলে চলবে না, বলেছিল দিল্লি হাই কোর্ট। এখন কলকাতা হাই কোর্ট সে কথারই পুনরুক্তি করল। পশ্চিমবঙ্গের এসএসআরবি এই বার্তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কি? না দিলে, তা কেবল ব্যক্তির প্রতি নয়, মানবতার প্রতি রাষ্ট্রের অপরাধ। এসএসআরবি-র মনোভাবের সংশোধন প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Convicts
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE