Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Pradhan Mantri Aawas Yojna

হট্টমন্দির

সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, দলীয় রাজনীতির নানা দ্বন্দ্বে আরও একটি সংযোজন হতে চলেছে আবাস যোজনা, তেমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

PMAY.

পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়নি কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৬:০৭
Share: Save:

এগারো লক্ষেরও বেশি দরিদ্র পরিবারের পাকা বাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত স্থগিত রইল, কারণ এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়নি কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। প্রকল্পের রূপায়ণে নানা গরমিল ধরা পড়ায় গত বছর প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছিল। অতঃপর প্রকল্পের নাম বদল, প্রাপকদের তালিকা সংশোধন-সহ নানা ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার, তার বিবরণ (অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট) জমাও দিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। আশা ছিল, নতুন আর্থিক বছরে বকেয়া সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ মিলবে। তার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ— সংবাদে প্রকাশ, রাজ্যের কাজে ফাঁক রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। ফলে কবে ফের শুরু হবে গৃহনির্মাণ, তা অনিশ্চিত হয়ে রইল। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, দলীয় রাজনীতির নানা দ্বন্দ্বে আরও একটি সংযোজন হতে চলেছে আবাস যোজনা, তেমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও অপদার্থতার দিকে আঙুল তুলবে কেন্দ্র, আর কেন্দ্রের বঞ্চনা, বিরোধীর প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ করবে রাজ্য— এই পরিচিত সংলাপের পুনরাবৃত্তি শুনতে হবে রাজ্যবাসীকে। কিংবা হয়তো নির্বাচনের প্রাক্কালে, রাজনৈতিক গণিত অনুসারে কোনও এক ‘সুবিধাজনক’ সময়ে উপুড়হস্ত হয়ে কেন্দ্র আপন ঔদার্যের পরিচয় দেবে। ভাঙা টালি, বাঁশ-দরমার ঘরের বাসিন্দারা কোন পক্ষের উপর অধিক ভরসা রাখবেন, সেটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু ভোটের বাক্সের বাইরে প্রশাসনিক নিয়মকানুনের যে পরিসর, তার দিকে তাকালে আরও মৌলিক কিছু প্রশ্ন জাগে।

প্রথম প্রশ্ন, দুর্নীতি থামাতে গিয়ে প্রকল্পকেই থামিয়ে দেওয়া কি উত্তম প্রশাসকের পরিচয়? খাদ্য, আবাস, জল, বিদ্যুৎ প্রভৃতি প্রতিটি মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। যেখানে নাগরিক এখনও সেগুলির সুবিধা পায়নি, সেখানে অতি সত্বর সে সব পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই কেন্দ্রের বিশেষ যোজনাগুলি তৈরি হয়েছে, এবং তার জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রাজ্য সরকার সেই সব প্রকল্পের রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত, কেন্দ্র তার নজরদারি করবে। অপচয় এবং দুর্নীতি ঘটলে কেন্দ্র অবশ্যই রাজ্যের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারে, হিসাবে গরমিল জনসমক্ষে আনতে পারে, প্রকাশ্যে রাজ্য সরকারের সমালোচনাও করতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের প্রতি অসন্তোষ বা অনাস্থা দেখাতে গিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দই আটকে দিলে বস্তুত শাস্তি দেওয়া হয় দরিদ্র, নাচার মানুষগুলিকে। ওই অর্থ গৃহহীন মানুষদের প্রাপ্য। তাঁদের প্রয়োজনকে জরুরি বলে মানতে হবে। দুর্নীতি থামাতে গিয়ে বস্তিবাসী, ঝুপড়িবাসীকে তাঁদের প্রাপ্য আবাস থেকে বঞ্চিত করলে তাতে কেন্দ্রের অপদার্থতাই প্রমাণ হয়। প্রকল্প চালু রাখার পাশাপাশি যথাযথ হিসাব ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার কোনও উপায় সরকারি আধিকারিকরা জানেন না, সেটা হতে পারে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে দুর্নীতিহীন করার বিষয়ে যে কঠোর মনোভাব পশ্চিমবঙ্গে দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, তা সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই দেখাচ্ছে কি? একশো শতাংশ দুর্নীতিমুক্ত সরকারি প্রকল্পের দাবি কি অবাস্তব নয়? রাজকোষের অর্থের অপচয়, দলীয় নেতাদের স্বজনপোষণ অবশ্যই রোধ করতে হবে কেন্দ্রকে। কিন্তু তার জন্য উন্নয়নের কাজ থমকে রাখা চলে না।শেষ প্রশ্ন কেন্দ্রের নজরদারির পদ্ধতি নিয়ে। সরকারি প্রকল্পের নিয়মিত অডিট হয় রাজ্যের ও কেন্দ্রের স্তরে। তা ছাড়াও রয়েছে সামাজিক অডিট। সেই সব রিপোর্ট অনুসারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দাবি করার চাইতে, বার বার অনুসন্ধানকারী দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। এতে প্রশাসনিক কাজে দলীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপের সন্দেহগাঢ় হয়, কেন্দ্র ও রাজ্যের আধিকারিকদের পেশাদারি সম্পর্ক ব্যাহত হয়। গৃহহীনের অসহায়তা যেন নির্বাচনী লড়াইয়ের তাস হয়ে না ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE