E-Paper

সুচিন্তিত, কিন্তু...

ইস্তাহার রচনার সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কটিকে যদি সাময়িক ভাবে ভুলে যাওয়া যায়, তা হলে কংগ্রেসের ২০২৪ সালের ইস্তাহার বিষয়ে কয়েকটি ইতিবাচক কথা বলতেই হবে।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২১

—ফাইল চিত্র ।

গত দু’একটি নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারগুলি ভারী সুখপাঠ্য হয়েছিল। এ বারও হয়েছে। পড়লে মনে হয়, আদর্শ ভারতের চেহারাটি কেমন হওয়া উচিত, কোনও উদারবাদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুঝি তার রূপরেখা প্রকাশ করেছে। সমস্যা হল, কংগ্রেস তো ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ নয়, এনজিও-ও নয়— কংগ্রেস একটি রাজনৈতিক দল। অন্তত খাতায়-কলমে। ফলে, ইস্তাহারের কথাগুলি সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের বোধগম্য ভাষায় এবং ভঙ্গিতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটি দল অস্বীকার করতে পারে না— ‘আমরা লিখে দিয়েছি, এ বার মানুষ ঠিক বুঝে নেবে’, এমন বিশ্বাসে ভর করে রাজনীতি করলে যা হওয়ার, ২০১৯-এর নির্বাচনে তা-ই হয়েছে। ২০২৪-এ ব্যতিক্রমী কিছু ঘটবে, তেমন আশা করাও কঠিন। কোয়ান্টাম ফিজ়িক্স সম্বন্ধে সন্দিহান অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, বারে বারে একই জিনিস করে চলা এবং ভিন্নতর ফল প্রত্যাশা করা হল উন্মাদের লক্ষণ। কংগ্রেস আরও এক ধাপ এগিয়ে বারে বারেই কিছু না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে— তবে ভিন্নতর ফলের প্রত্যাশা নিশ্চয়ই আছে।

ইস্তাহার রচনার সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কটিকে যদি সাময়িক ভাবে ভুলে যাওয়া যায়, তা হলে কংগ্রেসের ২০২৪ সালের ইস্তাহার বিষয়ে কয়েকটি ইতিবাচক কথা বলতেই হবে। বর্তমান সময়ে ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, তারা যে বিজেপির তরলীকৃত সংস্করণ নয়, তা প্রতিষ্ঠা করতে পারা। রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতাদের অতীত আচরণের কথা মাথায় রাখলে নিঃসংশয়ে বলা মুশকিল যে, শেষ অবধি তাঁরা নরম হিন্দুত্বের ফাঁদটি এড়াতে পারবেন— তবে, এই ইস্তাহারে কংগ্রেস নিজেকে এমন ভাবে প্রকাশ করেছে, যাতে বিজেপির সঙ্গে তাদের ফারাক স্পষ্ট। কংগ্রেসের ইস্তাহারে যে ভারতের প্রতিশ্রুতি আছে, তা প্রকৃতার্থেই উদারবাদী। ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কথা যেমন আছে, তেমনই আছে তফসিলি জাতি, জনজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর জাতিভুক্ত মানুষদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে বিভিন্ন সুবিধার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু, সর্বজনীন উদারবাদের মূল সুরটি রয়েছে সর্বজনের সংজ্ঞা নির্ধারণের মধ্যে। সম্ভবত এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক ইস্তাহারে ‘এলজিবিটিকিউ প্লাস’ গোষ্ঠীর অধিকারের স্বীকৃতি মিলল। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের প্রশ্নটির উত্তর যে বেতনের হারে লিঙ্গবৈষম্য, যৌন হেনস্থা ইত্যাদি প্রসঙ্গকে এড়িয়ে খোঁজা সম্ভব নয়, সে কথাটিও ইস্তাহারে স্পষ্ট। ততখানি প্রকট ভাবে না-বলা হলেও বর্তমান সময়ের একটি জ্বলন্ত তর্কে কংগ্রেস নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে— শুধু জিডিপির বৃদ্ধি ঘটলেই যথেষ্ট নয়, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তার সুফল সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

সরকার গড়তে পারলে তা কোন পথে চলবে, ইস্তাহার তারই প্রতিশ্রুতি। অস্বীকার করা যাবে না যে, জনমোহনের বিভিন্ন উপাদান রয়েছে এই ইস্তাহারে। যেমন, সব শিক্ষাঋণ মকুব করা, দরিদ্র মহিলাদের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা নগদ হস্তান্তর ইত্যাদি। কিন্তু, উদার অর্থনীতির পরিসরে চালিত একটি সরকারের কর্তব্য কী হওয়া উচিত, সেই চিন্তার রূপরেখাও স্পষ্ট। যেমন, ইস্তাহার জানিয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এক জন কর্মী নিয়োগ করা হবে, যিনি মহিলাদের আইনি অধিকার আদায়ের কাজে সাহায্য করবেন। আচরণবাদী অর্থনীতির তত্ত্বে সার্বিক উন্নয়নের অভিমুখে এমন সহায়তার গুরুত্ব আলোচিত। আবার, শিক্ষাক্ষেত্রে চালু হওয়া বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষাকে পুনর্বিবেচনা করা, এবং রাজ্যের অধিকার স্বীকার করার কথাও বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এই সংবেদনশীলতাও জরুরি। সংবিধানের মূলগত আদর্শ বজায় রেখে নির্ভয় সর্বজনীন দেশ গঠনের দিকে নির্দেশ করেছে এই ইস্তাহার। সেই বার্তাটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছল কি না, প্রশ্ন সেটাই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Congress Rahul Gandhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy