—প্রতীকী ছবি।
দীপাবলি সমাগতপ্রায়। এই রাজ্যে দীপাবলির আগমন বার্তাটি সশব্দে ঘোষিত হয়। কারণ, শুধুমাত্র আলো আর ফুল-আবিরের আলপনায় সীমাবদ্ধ না থেকে দীপাবলি হয়ে দাঁড়ায় শব্দ-তাণ্ডবের উৎসব। চলতি বছরও যে ব্যতিক্রম হবে, এমন দুরাশা মনে না রাখাই ভাল। বরং অসুস্থ, প্রবীণ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই বছরটি নিয়ে বিশেষ রকম চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। এ-যাবৎ কাল এই রাজ্যে শব্দবাজির যে সর্বোচ্চ শব্দসীমা ছিল, সম্প্রতি সেই ৯০ ডেসিবেলকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ফলে, ৯০ ডেসিবেল অতিক্রমকারী যে সকল বাজি এত কাল লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি হত, সেই আড়ালটুকুও আর থাকবে না। আশঙ্কা, অতঃপর প্রকাশ্যেই দাপিয়ে বিক্রি হবে শব্দবাজি। তার মধ্যে কতটুকু নিষিদ্ধ, আর কতটুকুই বা নির্ধারিত সীমার মধ্যে, সেই বিচার করার সুযোগ ও সদিচ্ছা পুলিশ-প্রশাসনের থাকবে তো?
প্রসঙ্গত, সারা দেশে শব্দবাজির সর্বোচ্চ সীমার ক্ষেত্রে এত দিন পশ্চিমবঙ্গ ছিল ব্যতিক্রম। গোটা দেশে তা ১২৫ ডেসিবেল থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই তা বাঁধা ছিল সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেলে। তা সত্ত্বেও অবশ্য রাজ্যে নিষিদ্ধ শব্দবাজির ক্রয়-বিক্রয়কে সম্পূর্ণ আটকানো যায়নি। প্রায় প্রতি বছর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, হাসপাতাল চত্বরেও শব্দবাজির দাপটের অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। অথচ, দুর্গাপুজোর পর থেকেই একাধিক অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটকের খবর পুলিশের তরফ থেকে ফলাও করে প্রচার করা হত। তার পরও শহর-শহরতলিতে শব্দের দাপট কমেনি। অনুমান করা যেতে পারে যে, শব্দবাজির ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পরিমাণই বেশি। তারই ফল ভুগেছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, প্রতিবাদ করতে গিয়ে শব্দশহিদ হয়েছেন দীপক দাসের মতো অনেকে। তদুপরি, ৯০ ডেসিবেলের সীমারেখা বৃদ্ধির জন্যও বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ নিয়মিত দরবার করে এসেছেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে সেই ব্যবসায়ীদের আবদারেই যেন সিলমোহর দেওয়া হল।
লক্ষণীয়, শব্দবাজির এই দাপট এখন শুধুমাত্র কালীপুজোতেই সীমাবদ্ধ নেই, প্রায় সমস্ত উৎসবের অঙ্গ। যে কোনও পুজোর বিসর্জন, নববর্ষ, বিয়ে থেকে শুরু করে সাম্প্রতি লক্ষ্মীপুজোও সেই তালিকায় বাদ পড়েনি। সুতরাং, শুধুমাত্র কালীপুজোর প্রাক্কালে কিছু লোকদেখানো ধরপাকড়ে যে শ্রবণযন্ত্রটির স্বস্তি মিলবে না, তা এত দিনে স্পষ্ট। কেন এই উৎকট আনন্দ যাপনের রীতিকে সমূলে উৎপাটিত করা হবে না, ডেসিবেলের সূক্ষ্ম আঁক কষে কু-কর্মকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে, তার কোনও সদুত্তর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দিতে পারবে না। আতশবাজি ক্ষেত্রে যে রুজি-রোজগারের ফাটা রেকর্ড এত কাল বাজিয়ে আসা হয়েছে, হয়তো সেটি এ ক্ষেত্রেও শোনা যাবে। যে পেশা মানুষের সঙ্গে পশু-পাখির স্বস্তিটুকু মুহূর্তে ধ্বংস করতে সক্ষম, সেই পেশা বর্জনীয়। বিকল্প পেশার কি এতই অভাব? আশ্চর্য এটাই, প্রশাসনের শীর্ষমহলও এ ক্ষেত্রে নীরব থেকে প্রশ্রয় জুগিয়ে চলে। মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক দেশে এ-হেন ‘দুষ্টামি’ ঠেকানোর ভারটি প্রশাসনেরই। সহবত শেখানোর জন্য প্রতি বার আদালতকে আসরে নামতে হলে প্রশাসনের পক্ষে তা সু-ইঙ্গিতবাহী নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy