Advertisement
E-Paper

কাজের কথা

সমস্যা গভীরতর। বেকারত্বের হার মাপিবার সময় কেবল তাঁহাদেরই হিসাবে ধরা হয়, যাঁহারা কাজ খুঁজিতেছেন কিন্তু পান নাই।

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৫:৩৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেশের আর্থিক অবস্থা মাপিবার বিবিধ মাপকাঠি আছে, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা বুঝিতে চাহিলে সর্বাগ্রে কাজের বাজারের হাল জানা দরকার। তাহার কারণ, অধিকাংশ মানুষেরই সম্পদ বলিতে শ্রমশক্তি, তাঁহারা সেই শক্তি ব্যয় করিয়াই গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান করেন— কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, গতর খাটাইয়া বাঁচেন। এই মাপকাঠিতে ভারতের বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভয়াবহ। কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের পরিসংখ্যান নিয়মিত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করিয়া থাকে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) নামক অসরকারি সংস্থাটি। তাহাদের সাম্প্রতিক নথি বলিতেছে, কোভিড অতিমারির প্রথম পর্বের বিপর্যয় কিছুটা সামলাইয়া গত বৎসরের শেষের দিকে কর্মসংস্থান বাড়িতে শুরু করিয়াছিল, কিন্তু জানুয়ারি হইতেই আবার ভাটার টান দেখা দেয় এবং এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় প্রবাহ’ জোরদার হইবার সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের হার বাড়িতে শুরু করে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বেকারত্বের হার ১৩.৬ শতাংশে পৌঁছাইয়াছে, কিছু কিছু রাজ্যে এই হার আরও অনেক বেশি, যেমন পশ্চিমবঙ্গে তাহা ১৯ শতাংশ।

সমস্যা গভীরতর। বেকারত্বের হার মাপিবার সময় কেবল তাঁহাদেরই হিসাবে ধরা হয়, যাঁহারা কাজ খুঁজিতেছেন কিন্তু পান নাই। কাজের বাজার খারাপ হইবার কারণে যাঁহারা হাল ছাড়িয়া দিয়া সক্রিয় ভাবে কাজ খোঁজা বন্ধ করিয়া দিয়াছেন, তাঁহাদের হিসাবে ধরিলে প্রকৃত কর্মহীনের সংখ্যা আরও বেশি। এবং— এখানেই উদ্বেগ গভীরতর হয়— ভারতে সক্রিয় কর্মপ্রার্থীর অনুপাতও কমিতেছে। এই দুইয়ের সম্মিলিত পরিণামের একটি হিসাব মিলিয়াছে সিএমআইই-র রিপোর্টে: জানুয়ারি হইতে জুনের গোড়া অবধি সারা দেশে কর্মসংস্থান কমিয়াছে প্রায় আড়াই কোটি, অর্থাৎ আড়াই কোটি কর্মী বেকার হইয়াছেন। সমীক্ষকদের বক্তব্য, গত বছরের মে-জুনের পরে, অর্থাৎ লকডাউনের চূড়ান্ত পরিস্থিতির পরে কাজের বাজারে এতটা খারাপ অবস্থা আর হয় নাই। জিডিপি, বিনিয়োগ, মূল্যসূচক ইত্যাদির পরিসংখ্যান নানান সাজসজ্জা সহকারে পেশ করিয়া যে সরকারি মুখপাত্ররা ‘অচ্ছে দিন’-এর আশ্বাস দিতে চাহিতেছেন, তাঁহারা অনুগ্রহ করিয়া ‘কাজ’-এর কথায় আসুন।

কিন্তু কাজের কথা কেবল বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানে সীমিত নহে। সেই পরিসংখ্যানের স্রোতে একটি বড় প্রশ্ন হারাইয়া যায়— কাজের গুণমানের প্রশ্ন। হিসাবের খাতায় যাঁহারা বেকার নহেন, কর্মী, তাঁহারা কেমন কাজ করিতেছেন? সেই কাজের বিনিময়ে কী পাইতেছেন? কাজের চাপ এবং নিরাপত্তা কতখানি? যে কোনও সময়ে কাজ চলিয়া যাইবার আশঙ্কা কতটা? প্রচলিত পরিসংখ্যান কষিবার সময় এই সমস্ত প্রশ্নই প্রায় সর্বদা এক পাশে সরাইয়া রাখা হয়, তাহার ফলে মুড়িমিছরি এক দর হইয়া পড়ে। এই সমস্যাটি ক্রমশ বাড়িতেছে, কারণ কাজের গুণমান ক্রমশ নামিতেছে। বিশেষত, কোভিডের অভিঘাতে সেই অবনমন এক নূতন মাত্রা পাইয়াছে। বহু কর্মচ্যুত মানুষ কোনও ক্রমে জীবনধারণের তাগিদে অতি নিম্নমানের অনিশ্চিত এবং স্বল্পমজুরির কাজ জুটাইয়া দিনাতিপাত করিতেছেন, অনেকেই কাজ হারাইবার আশঙ্কায় আপনার বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্যের অঙ্কে অনেকখানি ছাঁটাই মানিয়া লইয়াছেন। ইহাও সুস্পষ্ট যে, কাজের বাজারে যে কর্মীরা যত নীচের দিকে, তাঁহাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অবনমন তত বেশি। দুনিয়ার অধিকাংশ দেশের মতোই ভারতেও সঙ্কটের কালে যে অসাম্য অতি দ্রুত বাড়িতেছে, তাহার পিছনে এই অবনতির এক বড় ভূমিকা আছে। বেকারত্বের অঙ্ক লইয়া বিচার বিশ্লেষণের সময় তাহার পশ্চাদ্‌বর্তী এই বাস্তবকে ভুলিলে চলিবে না। পরিসংখ্যান জরুরি, কিন্তু যথেষ্ট নহে।

Unemployment Coronavirus in West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy