অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির ক্রেতাদের সঙ্গে আর্থিক সমস্যার সুরাহা করতে কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী রাজ্যগুলিতে বিশেষ সহায়তা পরিষদ চালু হয়েছে। অন্য রাজ্যে একাধিক পরিষদ থাকলেও, এ রাজ্যে একমাত্র কলকাতাতেই একটি পরিষদ রয়েছে। অপর দিকে, জেলাগুলিতে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র সংস্থার সংখ্যা বেশি। মূলত আর্থিক কারণে, ক্রেতার সঙ্গে মধ্যস্থতার জন্য বার বার কলকাতায় আসা মুশকিল হয় এদের অনেকেরই। তাই রাজ্যের ক্ষুদ্র-অতি ক্ষুদ্র শিল্পমহলের দাবি, বিভিন্ন জেলাতেও পরিষদের শাখা খুললে তাদের আবেদন জানানো সহজ হবে। প্রশাসনের কর্তাদের কাছে এই বিষয়ে আর্জিও জানিয়েছে তারা।
অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের কিছু বিশেষ চাহিদা আছে। পণ্য বা পরিষেবা বিক্রির পরে ক্রেতার কাছ থেকে চুক্তিমতো অর্থ না পেলে সমস্যায় পড়তে হয় অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র সংস্থাগুলিকে। অনেক ক্ষেত্রে বকেয়া টাকা মার গেলে ব্যবসা উঠে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। কারণ, এই ধরনের শিল্পে পুঁজি অল্প। ফলে আর্থিক ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতাও সীমিত। কোর্ট-কাছারিতে দীর্ঘ দিন মামলা চালানোর মতো সঙ্গতি ও সময়, কোনওটাই এদের থাকে না। সহায়তা পরিষদের কাজই হল, এই ধরনের সমস্যা কম সময়ে মিটিয়ে ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি যাতে ব্যবসা চালাতে পারে, সেই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া অর্থ না পেলে পরিষদে আবেদন জানাতে পারে সংস্থাগুলি। আলোচনার মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে পাওনা মেটানোর চেষ্টা করে পরিষদ। ব্যর্থ হলে বিষয়টি সালিশি প্রক্রিয়ায় যায় এবং পরিষদের নির্দেশমতো সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে শর্তসাপেক্ষে সুদ সমেত বিক্রেতার আসল অর্থ মেটাতে হয়। প্রসঙ্গত, ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পের অন্যতম সমস্যা হল পুঁজির জোগান, ব্যবসা গড়ে তোলার উপযুক্ত পরিকাঠামো ও পরিবেশ এবং সরকারি সহায়তার অভাব। বিশেষ করে নোট বাতিলের পরে এবং অতিমারি কালে দেশ জুড়ে এই ধরনের সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষুদ্র শিল্প মন্ত্রকের বার্ষিক রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা থাকার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই রাজ্য। যে-হেতু রাজ্যের অর্থনীতির চাকা চলমান রাখতে এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই সরকারের কাজ হল এই সব সংস্থার বাণিজ্য চালানোর ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা।
রাজ্যে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি। স্বনির্ভর ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ নিযুক্ত থাকেন এই ব্যবসায়। কম মূলধনে ব্যবসা শুরু করা যায় এ ক্ষেত্রে। তা ছাড়া, এই ক্ষেত্রটি অতি শ্রমনিবিড় হওয়ার ফলে সমান পুঁজি লগ্নিতে বৃহৎ বা মাঝারি শিল্পের তুলনায় বেশি কর্মসংস্থানও হয় ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পে। শিল্পবিমুখতার ঐতিহ্য এখনও রাজ্যে বর্তমান। জমি জটের সঙ্গে এখন রয়েছে সিন্ডিকেটের উপদ্রবও। ফলে রাজ্য সরকার শিল্প আনার প্রচেষ্টায় বার্ষিক ‘শিল্প সম্মেলন’-এর আয়োজন করলেও পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প অধরাই। ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যবসার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলি আছে, আগামী দিনে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সেই সূত্রে আরও পরিষদ রাজ্যের অন্যত্রও হওয়া প্রয়োজন। এই সুযোগ হাতছাড়া করলে আখেরে রাজ্যেরই ক্ষতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy