E-Paper

আপাতত স্বস্তি

ফেব্রুয়ারির পর থেকে ব্যাঙ্ক তিন দফায় রেপো রেট মোট এক শতাংশ-বিন্দু হ্রাস করল। নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ এবং সাহসী পদক্ষেপ। দেশে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ায় ব্যাঙ্কের পক্ষে সিদ্ধান্তগ্রহণ সহজতর হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ০৬:১১

খানিক দেরিতেই দৌড়ে যোগ দিয়েছিল ভারত। আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদের হার কমানোর শিথিল মুদ্রা নীতি গ্রহণ করার পর দুনিয়ার বহু দেশ যখন সুদ কমানোর পথে হেঁটেছিল, ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সতর্ক ভঙ্গিতে অপেক্ষা করেছিল। তার পর, ফেব্রুয়ারির পর থেকে ব্যাঙ্ক তিন দফায় রেপো রেট মোট এক শতাংশ-বিন্দু হ্রাস করল। নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ এবং সাহসী পদক্ষেপ। দেশে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ায় ব্যাঙ্কের পক্ষে সিদ্ধান্তগ্রহণ সহজতর হয়েছে। এপ্রিলে খুচরো পণ্যের মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩.১৯%; অনুুমান, মে মাসে হারটি সামান্য হলেও কমতে পারে। স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস বাজারকে স্বস্তি দিয়েছে, ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ তুলনায় কম। ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ অনুমান যে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে মূল্যস্ফীতির গড় হার থাকবে ৩.৭ শতাংশের আশেপাশে— যা ব্যাঙ্কের আগের অনুমান ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকখানি কম, এবং ব্যাঙ্কের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্গত। কাজেই, অন্তত এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির বিপদ নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে জুন মাসের মনিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে ০.৫ শতাংশ-বিন্দু সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল। পাশাপাশি, আরও এক বার পরিবর্তিত হল পলিসি আউটলুক— অ্যাকমোডেটিভ থেকে এখন তা নিউট্রাল। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে ব্যাঙ্ক সম্ভবত এত দ্রুত এবং তাৎপর্যপূর্ণ হারে সুদ কমাবে না। বরং, অর্থব্যবস্থার উপরে বর্তমান শিথিল মুদ্রা নীতি কী প্রভাব ফেলে, নজর থাকবে সে দিকে।

এই মুহূর্তে সুদের হার এতখানি কমানোর কারণ কী, ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র তা স্পষ্ট বলেছেন— দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় এবং বিনিয়োগকে উৎসাহ দিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে উচ্চতর কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে থাকলে মুদ্রা নীতির মাধ্যমে আর্থিক বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেওয়া রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকারভুক্ত। সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ক্যাশ রিজ়ার্ভ রেশিয়ো কমিয়েছে এক শতাংশ-বিন্দু। ব্যাঙ্কের অনুমান, দুই নীতির সম্মিলিত ফল হিসাবে ২০২৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে প্রাথমিক নগদের জোগান বাড়বে অন্তত আড়াই লক্ষ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে এই বাড়তি নগদ অর্থব্যবস্থার পক্ষে সঞ্জীবনী সুধার কাজ করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাজারে যে টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে, তাতে বৈশ্বিক উৎপাদন শৃঙ্খলে চিনের গুরুত্ব কমানোর প্রবল তাগিদ কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধি করার সুবর্ণসুযোগ রয়েছে। ঋণের ব্যয় কমলে উৎপাদনে জোর দিতে চাইবেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষত, কেন্দ্রীয় সরকার যদি বাণিজ্য নীতি সংস্কার করে ফের উদার অর্থনীতির পথে হাঁটতে মনস্থ করে, তা হলে চাহিদার জন্য মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারের উপরে নির্ভর করার বাধ্যবাধকতাও থাকে না।

কিন্তু, ব্যাঙ্কের গভর্নরের আরও একটি কথা একই রকম স্মর্তব্য— তিনি বলেছেন, মুদ্রা নীতি দ্বারা আর্থিক বৃদ্ধিতে সহায়তার সুযোগ অতি সীমিত। সুদের হার কমলেই মূল্যস্ফীতির হারের উপরে তার বিপরীতমুখী প্রভাব পড়ে, ফলে ধারাবাহিক ভাবে সুদ কমিয়ে চলা ব্যাঙ্কের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে, আর্থিক বৃদ্ধিকে নির্ভর করতে হবে মূলত চাহিদার উপরেই— আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা, এবং অতি অবশ্যই অভ্যন্তরীণ চাহিদা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে গত দশ বছরে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হয়েছে। বেকারত্বের হার যদি বা খানিক নিয়ন্ত্রণে আসে, বেতনের প্রকৃত বৃদ্ধি নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর— ফলে, অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি এই সমস্যাটিকে গুরুতর করেছে। ফলে, অর্থব্যবস্থাকে যদি গতিশীল করে তুলতে হয়, তা হলে সরকারকে এই দিকগুলিতে নজর দিতে হবে। শুধুমাত্র রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভরসায় বৃদ্ধির উচ্চতর কক্ষপথে পৌঁছনোর স্বপ্ন না দেখাই বিধেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

repo rate RBI Economy Trade Deals

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy