E-Paper

দুরবস্থা

প্রান্তিক স্টেশনের এক দিকে কাজ চলায়, রেক ঘুরতে সমস্যা। ফলে, মেট্রোর গতির সুবিধাটিও গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:১৫

মেট্রো রেল কি জীবনরেখা থেকে কলকাতার দুর্ভাগ্যরেখায় পর্যবসিত হচ্ছে? রেকের অপ্রতুলতায়, প্রায়শই ধোঁয়া বা আগুনের ফুলকির খবরেও অধুনা নিত্যযাত্রী অভ্যস্ত। ত্রস্ত, বিরক্ত, তবে বিস্মিত নন। ক্রমে নতুনতর বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। পাতালপথে বৃষ্টির জল প্রবেশে পরিষেবা বন্ধ হওয়ার ঘটনা বড় বিপর্যয়ের অগ্রপথিক কি না— জল্পনার মধ্যেই, ঘোরতর দুঃসংবাদ। সংস্কারের প্রয়োজনে মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইনের প্রান্তিক স্টেশন কবি সুভাষ, কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত তথ্যানুযায়ী, ন’মাসের জন্য বন্ধ। এই স্টেশন শুধু নিউ গড়িয়াবাসীর অবলম্বনই নয়, দক্ষিণ শহরতলি ও বাকি রাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল-জংশনও বটে। দুর্ভোগে অগণিত। শাটল বাসে ঠাসাঠাসি যাত্রীরা পরের স্টেশনে গিয়ে মেট্রো ধরছেন। প্রান্তিক স্টেশনের এক দিকে কাজ চলায়, রেক ঘুরতে সমস্যা। ফলে, মেট্রোর গতির সুবিধাটিও গিয়েছে।

নির্মাণে গাফিলতি ও দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের যুগপৎ পরিণাম এই দুরবস্থা। ভূবিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা বার বার সতর্ক করেছেন, কলকাতার নদীসংলগ্ন ও জলাভূমির জমিতে অতিকায় নির্মাণ তোলার সময়ে বহু বিধিনিয়ম পালন আবশ্যিক। মেট্রোকর্তারা এক প্রকার স্বীকারও করেছেন, ২০১০ সালে তৈরি স্টেশন, যার অন্তত একশো বছর টেকার কথা, মাত্র দেড় দশকেই এ-হেন ‘বসে যাওয়া’র কারণ নালার উপরের জলাজমিতে স্তম্ভগুলি যত গভীরে প্রোথিত হওয়ার কথা, ততটা হয়নি। আগেই এই স্টেশনের স্তম্ভে ফাটল দেখা দিয়েছিল। কয়েক দিনের অবিশ্রান্ত বর্ষণে ভিতের জলস্তর উঠেছে, স্তম্ভ আরও বসে ফাটল বেড়েছে। ভূপ্রকৃতির সম্যক বিচার ছাড়াই জনমোহিনী লক্ষ্যে তড়িঘড়ি নির্মাণ শুরু হয়েছিল কি না, তখন রেল মন্ত্রকে কারা— সেই কাটাছেঁড়াই চলছে। কিন্তু, সুরক্ষার ফাঁকের দায় যেমন ভূতপূর্ব কর্তৃপক্ষের, তেমনই বর্তমান পদাধিকারীরাও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটির অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন না। নিয়মিত তদারকি চললে, আগেই বিষয়টি নজরে আসত এবং জল পড়ে পড়ে মাটি আরও দ্রবীভূত হওয়ার আগেই মেরামতি করা যেত। বাকি স্টেশনগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষাও অবিলম্বে প্রয়োজন। কিন্তু, সেই সদিচ্ছার খবর নেই। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি অক্ষুণ্ণ রাখতে দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত বাড়তি ট্রেন চালানোর দাবিতে যাঁরা নিরুত্তর, সম্ভবত এই প্রয়োজনটিও তাঁদের কাছে বাড়তি ঝামেলাই।

এত বিভ্রাটের একটি কারণ দক্ষ কর্মীর অভাব। মেট্রোর দায়িত্বে যাঁরা, তাঁরা মূলত ভারতীয় রেলব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত। তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন যাতে ক্রমবর্ধমান শহর, তার জলবায়ু, যাত্রীদের চাহিদা বুঝে দূরদর্শিতার সঙ্গে সমস্যাগুলিকে নির্ণয় ও দ্রুত সমাধান করতে পারেন। এর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় দরকার। পূর্বে রাজ্যও মেট্রোর কিছুটা ব্যয়ভার ও দায়ভার বহন করত। তার পরিবর্তে ব্যবস্থাটিকে সম্পূর্ণ রেলের উপর ন্যস্ত ও কেন্দ্রাভিমুখী করায় অসুবিধা হচ্ছে। বিকল্প গণপরিবহণ জোগাতে প্রশাসন ব্যর্থ। ফলে শহরকে গতিশীল রাখার পরিষেবার গুরুভার মেট্রোর উপর বর্তাচ্ছে, তার সীমা বাড়াতেই হচ্ছে। অতএব, মানুষের দুর্ভোগ প্রশমনে রাজ্যকে রেলকে সুপরামর্শ ও পরিকাঠামোগত নানা সহায়তা দিতে হবে। রাজনৈতিক বৈরিতা সরিয়ে দু’তরফেরই বিষয়টিকে কর্তব্য রূপে দেখা উচিত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Metro Kavi Subhas Metro

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy