E-Paper

অপেক্ষমাণা

নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম: এই নামেই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঐতিহাসিক মহিলা সংরক্ষণ বিলটি লোকসভা এবং রাজ্যসভার বিশেষ অধিবেশনে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমেই পাশ হয়েছিল।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ ০৭:০০

স ‌ংসদে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবিটি দীর্ঘ দিনের। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সেই বহু প্রতীক্ষিত বিল পাশ হয়। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম: এই নামেই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঐতিহাসিক মহিলা সংরক্ষণ বিলটি লোকসভা এবং রাজ্যসভার বিশেষ অধিবেশনে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমেই পাশ হয়েছিল। কিন্তু বিলটির বাস্তবায়ন কবে হবে, তা নিয়ে সংশয় যথেষ্ট ছিল। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীও জানিয়েছিলেন, এই বিল এখনই কার্যকর না হলে মহিলাদের প্রতি অবিচার করা হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তা কার্যকর করা হয়নি। সরকার পক্ষের দাবি ছিল লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করে সামগ্রিক আসন-সংখ্যা বৃদ্ধি হলে তবেই মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ বাস্তবায়িত করা সম্ভব। এবং এই সমগ্র প্রক্রিয়াটির পূর্বে প্রয়োজন জনগণনার কাজ শেষ করা। কিন্তু জনগণনা থেকে শুরু করে মহিলাদের সংরক্ষণ— এই সম্পূর্ণ পথটি কবে অতিক্রম করা সম্ভব হবে, স্পষ্ট করা হয়নি সরকারের তরফে। সম্প্রতি সেই ধোঁয়াশা কেটেছে। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, ২০২৭ সালের ১ মার্চের মধ্যে জনগণনার কাজটি সেরে ফেলা হবে। অতঃপর লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস এবং পরের ধাপে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের কাজটি সম্পূর্ণ হবে আগামী লোকসভা ভোটের আগেই।

এই পদক্ষেপ স্বাগত। যদিও বহু বিলম্বে, এবং প্রশ্নের অবকাশ রেখেই। মহিলাদের আসন সংরক্ষণের ইতিহাসটি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হতেই অতিক্রান্ত হয়েছে ২৭টি অমূল্য বছর। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিলটি প্রথম পেশ করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, অতঃপর ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৮-এ। প্রথম তিনটি বিল খারিজ হয় লোকসভাতেই। ২০০৮ সালে রাজ্যসভায় পাশ হলেও লোকসভায় তা পাশ হতে পারেনি। ২০১৪ সালে সংসদীয় আসনে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের বিলটি খারিজ হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংক্রান্ত অমীমাংসিত প্রশ্নে। অবশেষে ২০২৩ সালে তাতে সিলমোহর পড়লেও আসন পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে ফের সেটিকে কার্যকর করার বিষয়টি পিছিয়ে দেওয়া হয়। জনগণনা এবং আসন পুনর্বিন্যাসের মতো দীর্ঘকালীন দুই প্রক্রিয়ার সঙ্গে কেন মহিলা সংরক্ষণ বিল কার্যকর করার বিষয়টি যুক্ত করা হল, তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া দুষ্কর। একই রকম যুক্তিহীন হঠাৎ আগামী লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ ধার্য করাও। ২০২৭ সালে জনগণনার কাজ শেষ করে, তার ফল প্রকাশ করে, তার ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে আসন পুনর্বিন্যাস করে মহিলা সংরক্ষিত আসন চিহ্নিত করা— এই বিপুল পরিমাণ কাজ এত স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা আদৌ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন থাকলই।

জনগণনা এবং আসন পুনর্বিন্যাসের মতো বিষয়গুলির সঙ্গে বহু জটিল প্রশ্ন জড়িয়ে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, তাঁদের রাজ্যগুলির আসন কমিয়ে উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলির আসন বাড়াতে চায় মোদী সরকার। দাবি উঠেছে একটি সংসদীয় কমিটি এবং সংবিধান সংশোধনেরও। এই সংক্রান্ত আলোচনা এবং সমাধানের পথটি এখনও দূর অস্ত্। শুধুমাত্র আসন পুনর্বিন্যাস কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তটুকু নেওয়া হয়েছে। এই বহুস্তরীয় জটিলতার অবসান না করেই আসন পুনর্বিন্যাস এবং পরের ধাপে মহিলা আসন সংরক্ষণের সময়সীমা স্থির করে দেওয়া কত দূর বাস্তবসম্মত, প্রশ্ন থেকেই যায়। তদুপরি, এত তাড়াহুড়োয় ত্রুটি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাটিও বিপুল। বিল পাশ হওয়ায় সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসনে মহিলাদের দেখতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। কিন্তু তার প্রক্রিয়াগত ক্ষেত্রটিতে স্বচ্ছতা না থাকলে মহিলা সংরক্ষণের মতো ন্যায্য বিষয়ও ক্ষোভের মুখে পড়বে। সরকার সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Perliament perliament Census

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy