সঙ্কটে রাজ্যের বস্ত্রশিল্প। অভিযোগ, রফতানি সংক্রান্ত সচেতনতার অভাবে কমপক্ষে ১০০০ কোটি টাকার বাজার হাতছাড়া হচ্ছে রাজ্যের পোশাক ব্যবসায়ীদের। খাস কলকাতার খিদিরপুরেই জামাকাপড়ের বিশাল বাজার রয়েছে। জানা গিয়েছে, এখানকার ছোট সংস্থাগুলি দ্বারা তৈরি কাপড়ের মান ভাল হলেও মান পরীক্ষকের স্বীকৃতি ছাড়া সেগুলি রফতানির ছাড়পত্র মেলে না। পণ্যের মান পরীক্ষার সময় কারখানার সুরক্ষার পাশাপাশি কর্মীদের বেতন এবং বাধ্যতামূলক ভাবে দেয় পাওনা মেটানো হচ্ছে কি না, তা-ও যাচাই করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থাই এগুলো পরীক্ষা করায় না। ফলে রফতানির স্বীকৃতিও মেলে না। অথচ, পণ্যের মান এবং সেই সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করে প্রচুর রফতানি করছে বারাসত-সহ কিছু এলাকার সংস্থা।
এমনিতেই বস্ত্র শিল্পের মতো ক্ষুদ্র ছোট এবং মাঝারি ক্ষেত্রগুলিতে পরিকাঠামোগত সমস্যা বিবিধ। আধুনিক সুযোগ সুবিধার অভাব এর পরিচালনের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া, ব্যাঙ্কের তরফে আর্থিক সহযোগিতার অভাবও এই ক্ষুদ্র শিল্পের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। এর সঙ্গে রয়েছে দক্ষ কর্মীর অপ্রতুলতা, কাঁচামাল আহরণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা, দুর্বল বিপণনও। লক্ষণীয়, এগুলি শুধু ক্ষুদ্র বস্ত্র শিল্প নয়, সমস্ত অসংগঠিত শিল্পক্ষেত্রেরই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় কত সস্তায় কত জিনিস দেওয়া যায়, চলে তারই প্রতিযোগিতা। কিন্তু তা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বস্ত্র-ব্যবসায়ীর লাভে টান পড়ে, কারণ রফতানির ছাড়পত্রের অভাবে তাঁর কাছে বিদেশের বাজার থেকে যায় অধরা। সে ক্ষেত্রে নিজের লভ্যাংশ বজায় রাখতে তাঁকে কমাতে হয় শ্রমিকের মজুরি। লক্ষণীয়, কোনও শিল্পকে ক্ষুদ্র থেকে ছোট এবং পরবর্তী কালে মাঝারিতে উন্নীত করার প্রচেষ্টাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অথচ, এই সব সমস্যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে তার উত্তরণের পথটি। অন্য দিকে, সরকারি লাল ফিতের জট ক্ষুদ্র শিল্পের সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। ভুললে চলবে না, বহু ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের কাজ কতিপয় শ্রমিককে দিয়ে বাড়িতেই করা হয় বলে, এঁদের বিষয়ে উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না সরকারের পক্ষে। ফলে সমস্যাগুলির মূল্যায়ন ও যথাযথ প্রতিকার হয় না বলেই দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারে না ক্ষুদ্র শিল্পগুলি।
এ দিকে, ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে শুল্কমুক্তির কারণে সে দেশে পোশাক রফতানি ২০-৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে আমদানি ভারত বন্ধ করার পরে রফতানির সুযোগ খোলার কথা নেপাল-ভুটানেও। এ-হেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হলে চাই সরকারি সহযোগিতায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। তাতে রাজ্যেরও আয়বৃদ্ধি হবে। শুধু তা-ই নয়, কী করে এই উদ্যোগীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামো দিয়ে আরও উন্নত এবং লাভজনক পণ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা যায়, রাজ্য সরকারের নীতিতে তার দিশা থাকতে হবে। এ কথাও ভুললে চলবে না, উদ্যোগের প্রসার ঘটিয়ে আরও বড় শিল্প করার পথটি এ রাজ্যে সহজ নয়। সেখানে বাধা অনেক, যার অন্যতম রাজনৈতিক দলগুলির উৎকোচের দাবি। দুর্নীতিমুক্ত, তৎপর প্রশাসনও শিল্পের পরিকাঠামোর একটি অঙ্গ, সরকারের সেটা মনে রাখা দরকার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)