আবার চাপে ভারত। কিছু দিন আগেই রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ভারতের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। এ বার ইরানকে জব্দ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার যে পদক্ষেপ করল, তাতেও ভারতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সম্প্রতি আমেরিকার ঘোষণা, ইরান ফ্রিডম অ্যান্ড কাউন্টার-প্রলিফারেশন অ্যাক্ট (আইএফসিএ)-এর অধীনে ইরানের চাবাহার বন্দর নিয়ে ২০১৮ সালে প্রদত্ত ছাড় প্রত্যাহার করছে তারা। এই ছাড় ভারত এবং অন্যান্য দেশকে আমেরিকার জরিমানার ঝুঁকি ছাড়াই ওই বন্দরে কার্যকলাপের অনুমতি দিয়েছিল। ইরানি সরকারকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে এ-হেন পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ নীতির অংশ হিসেবেই দাবি করেছে সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইরান সফরকালে, ভারত, ইরান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি (চাবাহার চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়। এর দু’বছর পর থেকেই ভারত চাবাহার বন্দর পরিচালনা করে আসছে, যার ফলে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে বাণিজ্য-পথ স্থাপনের পাশাপাশি মানবিক সহায়তাও পৌঁছে দিতে পেরেছে দিল্লি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জারি করা এই ছাড়টি ছিল একটি পরিকল্পিত পরিকল্পনা, যা ভারতকে চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। সেই সময়ে, আফগানিস্তানের তৎকালীন নির্বাচিত সরকারকে সাহায্য ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য বন্দরটিকে অপরিহার্য হিসেবে দেখা হয়েছিল। তা হলে, সম্প্রতি কেন সেই ছাড় তুলে নেয় আমেরিকা? এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের যুক্তি, ২০২১ সাল থেকে আফগানিস্তান তালিবানদের দখলে চলে যাওয়ার পরে সেখানে এখন আর মানবিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তাই তারা বন্দর সংক্রান্ত ছাড় প্রত্যাহার করছে। তা ছাড়া, এই পদক্ষেপের অন্যতম উদ্দেশ্য, ইরানের চরমপন্থী কার্যকলাপের ক্ষেত্রে অবৈধ তহবিলের প্রবাহ ব্যাহত করা।
এ দিকে আমেরিকার এ-হেন প্রত্যাহার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক— উভয় চ্যালেঞ্জের মুখেই দাঁড় করিয়ে দিল ভারতকে। ভারত কর্তৃক পরিচালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিদেশি বন্দর শহিদ বেহেশতি টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ইরানের সঙ্গে ১০ বছরের একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করার মাত্র এক বছর পর এই পদক্ষেপ করা হল। এতে বন্দরের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় সংস্থাগুলির আমেরিকার জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ল, তেমনই বন্দর প্রকল্পের ভবিষ্যতের সম্প্রসারণ এবং তার সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগগুলিকেও ঠেলে দিল ঝুঁকির মুখে। অন্য দিকে, কৌশলগত ভাবে, পাকিস্তানের গ্বদর বন্দরের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে চিন, তা প্রতিহত করতেই চাবাহার বন্দরটিকে কাজে লাগাচ্ছিল ভারত। যদি নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের সেই পরিকল্পনা ব্যাহত হয়, তা হলে তা চিনের কাছে সুযোগ এনে দেবে কোনও বিরোধিতা ছাড়াই নিজের লক্ষ্য পূরণ করার। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে ভারতের সঙ্গে ইরানের অর্থনৈতিক সম্পর্কও প্রভাবিত হতে পারে। তবে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চাবাহারকে কী ভাবে সচল রাখা যায়, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ দিল্লির কাছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)