E-Paper

ভুল ওষুধ

হু-তে কর্মরত আমেরিকার সরকারি আধিকারিক ও চুক্তিকর্মীদের ফিরিয়ে আনা হবে, আমেরিকাই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজের জন্য আস্থাভাজন আন্তর্জাতিক সংস্থা খুঁজে নেবে অংশীদারির জন্য।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪২

হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নথিগুলিতে স্বাক্ষর করলেন, তার একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে আমেরিকার প্রস্থানের নির্দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য-বিষয়ক সংস্থা হু-র কাছে এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয়। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর প্রথম মেয়াদের সময়েই আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছিল, আমেরিকা সদস্যপদ ছেড়ে দিতে চায়। কারণও জানানো হয়েছিল— চিনের উহান থেকে সূচিত কোভিড অতিমারির মোকাবিলায় হু-র ব্যর্থতা, বিভিন্ন সদস্য দেশের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে হু-র অপারগতা, সংস্কারে অনিচ্ছা, ইত্যাদি। নালিশের তালিকায় রয়েছে টাকার অঙ্কও— চিনের জনসংখ্যা আমেরিকার চাইতে ঢের বেশি, অথচ আমেরিকার কাছে হু অনেক বেশি টাকা দাবি করে। অতএব আমেরিকা হু-কে অনুদান দেওয়া বন্ধ করতে চলেছে। হু-তে কর্মরত আমেরিকার সরকারি আধিকারিক ও চুক্তিকর্মীদের ফিরিয়ে আনা হবে, আমেরিকাই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজের জন্য আস্থাভাজন আন্তর্জাতিক সংস্থা খুঁজে নেবে অংশীদারির জন্য। তবে সারা বিশ্বের কাছেই যা বিশেষ চিন্তার বিষয়, তা হল অতিমারি বিষয়ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা থেকে আমেরিকার প্রস্থান। অতিমারি পরিস্থিতিতে যাতে সব দেশের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটা সংহতি থাকে, যাতে টিকা, ওষুধ প্রভৃতির সুষম বণ্টন করা যায়, সে উদ্দেশ্যে একটি চুক্তি তৈরির চেষ্টা করছিল হু। আমেরিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে হু-র কোনও চুক্তির শর্ত মানতে তারা বাধ্য নয়। এর পরে এই চুক্তি কতটা অর্থপূর্ণ হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।

আমেরিকা সরে দাঁড়ালে অর্থের ঘাটতির পাশাপাশি হু-র প্রতি আস্থার ঘাটতিও বড় হয়ে দেখা দেবে। হু-র কাঠামো এবং কার্যপদ্ধতিতে নানা সমস্যা রয়েছে— অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিকতা, দক্ষতা এবং তৎপরতার অভাব, সংস্কারের অভাব, প্রভৃতি। কিন্তু সদস্যপদ প্রত্যাহার তার সমাধান নয়। এর ফলে কেবল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে নয়, আমেরিকার নাগরিকদেরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে ট্রাম্প সরকার। নানা ধরনের সংক্রামক অসুখ যে আমেরিকায় তুলনামূলক ভাবে কম, তার অন্যতম কারণ অন্যান্য দেশে সে সব অসুখের প্রসার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যাচ্ছে। তাতে হু-র ভূমিকাও কম নয়। স্মল পক্স নিশ্চিহ্ন করা, পোলিয়োকে নির্মূল করার পথে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় হু-র অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বের সংক্রামক অসুখের যে বিপুল তথ্যভান্ডার সংগ্রহ করছে হু, আমেরিকা তা থেকে বঞ্চিত হবে। আর হু বঞ্চিত হবে আমেরিকার উৎকৃষ্ট গবেষণা সংস্থাগুলির সহযোগিতা থেকে।

তবে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটি হু-র গ্রহণযোগ্যতার নয়। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার মতো একটি জরুরি বিষয়ে আমেরিকার মতো একটি বৃহৎ রাষ্ট্র যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, এটাই সমস্যা। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার যে পরিকাঠামো বর্তমান বিশ্বে কাজ করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সংস্থাটি। প্রায় সব দেশের সরকার ও চিকিৎসক সমাজের সঙ্গে হু-র যে সম্পর্ক, তা অপর কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেই। অতিমারি-সহ নানা সঙ্কটের মোকাবিলায় সুসংহত কর্মসূচি প্রয়োজন। কী করে তা সম্ভব হবে, তার পথ না খুঁজেই সকলের পথ পরিহার করা আমেরিকাকে বিশ্বের নেতৃত্বের পদ ফিরিয়ে দেবে, না কি বিচ্ছিন্ন করবে, সে প্রশ্ন উঠে গেল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WHO america

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy