Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National news

পালে বাঘ পড়ার গল্পটা ইমরানরা জানেন তো?

পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যে মাত্রায় পৌঁছেছিল, তা গত দু’দশকে দেখা যায়নি। সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার উচ্চারণ করছিলেন শান্তির বার্তা।

গুরুদ্বার দরবার সাহিব করতারপুর।—ফাইল চিত্র।

গুরুদ্বার দরবার সাহিব করতারপুর।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৪
Share: Save:

দেওয়ালে পিঠ যে ঠেকেছে, সে কথা পাকিস্তান নিজেই সবচেয়ে ভাল জানে। নিজের ভুলেই যে এই হাল, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এ হেন পরিস্থিতিতেও নিষ্ঠুর দ্বিচারিতার পথ থেকে সম্ভবত সরে আসতে পারছে না পাকিস্তানি রাষ্ট্র। পালে বাঘ পড়ার প্রখ্যাত কাহিনিটা বোধ হয় জানা নেই ইসলামাবাদের কর্তাদের।

পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যে মাত্রায় পৌঁছেছিল, তা গত দু’দশকে দেখা যায়নি। সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার উচ্চারণ করছিলেন শান্তির বার্তা। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, আশার প্রদীপ খোঁজার চেষ্টা করাই মানবজাতির ধর্ম। অতএব, ইমরান খানের একের পর এক ভাষণ এবং বিবৃতিতে শান্তির বার্তা শুনে ভরসা রাখার ইচ্ছা সামলানো যায়নি। দুই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে টানাপড়েনটা যে পর্যায়েই থাক, ইমরানের বেশ কয়েকটা উচ্চারণ প্রশংসিত হচ্ছিল ভারতেও। পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের মতো নন, এক উন্মুক্ত পৃথিবীর নাগরিক ছিলেন ক্রিকেটার ইমরান, তাই সত্যিই হয়তো শান্তি চাইছেন— এমন ভাবনাকে রসদ জোগানোর যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পুলওয়ামা কাণ্ড এবং তার প্রেক্ষিতে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের অব্যবহৃত পরে যে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ পাক রাষ্ট্রের গলায় মরণ ফাঁস হিসেবে চেপে বসতে শুরু করেছিল, সেই চাপ সময়ের নিয়মে কিছুটা হালকা হতেই পাকিস্তান আবার চিরাচরিত রূপে। ইমরান কি তাহলে পোড়খাওয়া পাকিস্তানি রাজনীতিকদের চেয়েও দুঁদে? তাঁর মুখ এবং মুখোশের মধ্যে ফারাক খুঁজে বার করা কি আরও কঠিন? প্রশ্ন চিহ্নগুলো খুব বড় আকার নিচ্ছে।

ভারতীয় রাষ্ট্রের সঙ্গেই জন্ম পাকিস্তানি রাষ্ট্রেরও। কিন্তু গত ৭ দশকে পরস্পরের চেয়ে যোজন এগিয়ে বা পিছিয়ে গিয়েছে দু’দেশ। অর্থনীতির আকার, আর্থিক বৃদ্ধির হার, বাণিজ্যিক সক্ষমতা, সামরিক শক্তি, মহাকাশ গবেষণা— সবেতেই ভারতের বিচরণ আজ বিশ্বের সেরাদের সারিতে। বিপরীতে পাকিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত, আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া এক পা এগনো অসম্ভব, দেউলিয়া হওয়ার কিনারায় দেশটা। গণতন্ত্রকে কিছুতেই স্থায়ী হতে না দেওয়া এবং ক্রমে ক্রমে সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক রাজধানী হয়ে ওঠা— মূলত এই দুই কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে পাকিস্তান। ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় আন্তর্জাতিক পরামর্শ মেনে নিয়ে সন্ত্রাস নির্মূলে সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপানো, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা প্রত্যেক রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং দেশে গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল করার জন্য প্রযত্নবান হওয়া। এ সব কথা মাথায় রেখেই ইমরান খান শান্তির বার্তা দিচ্ছিলেন বলে মনে হচ্ছিল এক সন্ধিক্ষণে। কিন্তু সে ধারনায় আবার জোরদার ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যদি শান্তিই চান তাহলে নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিরন্তর গোলাগুলির শব্দ কেন? প্রশ্ন জাগছিল আগেও। প্রশ্নটাকে অনেকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছিলাম না সচেতন ভাবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে আরও অনেক ধন্দ জাগিয়ে দিল ইসলামাবাদ। মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করল না। হাফিজ সইদরা পাকিস্তানে আর বহাল তবিয়তে নেই, এমন কোনও উপলব্ধির জন্ম হল না। ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার নেপথ্যে পাক ভূখণ্ডে লালিত সন্ত্রাসবাদীরাই রয়েছে— দিল্লির এই অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ চাইতে শুরু করলেন ইসলামাবাদের কর্তারা। ভারত সুস্পষ্ট তথ্যভিত্তিক চিঠি পাঠানোর পরেও পাকিস্তান পত্রপাঠ অস্বীকার করল সে দেশের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটির অস্তিত্বের কথা। সাম্প্রতিকতম নিষ্ঠুর রসিকতার নমুনা পাকিস্তান রাখল করতারপুর করিডর নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য গঠিত প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নামের তালিকায়। পাক প্রতিনিধি দলের দুই চিহ্নিত খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীকে সামিল করা হল। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে আবার ২৬/১১ জঙ্গি হানার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আর কি বিশ্বাস করার কোনও উপায় রয়েছে যে, পাকিস্তান শান্তি চায়? ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হানায় বিপুল রক্তপাতের ধাক্কা সদ্য সইতে হয়েছে ভারতকে। সেই সন্ত্রাসবাদী হানার প্রেক্ষিতেই মারমুখী হয়ে উঠেছিল নয়াদিল্লি আর অকুণ্ঠ সহানুভূতির ভঙ্গিতে শান্তির ললিতবাণী উচ্চারণ করছিল ইসলামাবাদ। শোক-সন্তপ্ত ভারতীয় রাষ্ট্র সেই বাণীতে বিশ্বাস রেখে সংযমে ফিরতেই ফের পরিচিত চাতুর্যের আশ্রয়ে চলে গেল পাকিস্তান। একে নিষ্ঠুর রসিকতা এবং জঘন্য প্রতারণা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?

আরও পড়ুন: পাক প্রতিনিধি দলে খালিস্তানি নেতা, ভারতের আপত্তিতে করতারপুর বৈঠক স্থগিত

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সত্ত্বেও ভুলগুলোকে শুধরে নেওয়ার কথা যে পাক রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকরা এখনও ভাবতে পারছেন না, তা আবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে গেলে পাকিস্তানকে যে শুধরে নিতেই হবে ভুলগুলো, এই তত্ত্বে কোনও দ্বিমত নেই। মুখোশ সমর্পণ করে সত্যিকারের শান্তিকামী হয়ে উঠতে পাকিস্তানকে বাধ্য হতে হবে অচিরেই। সেই ক্ষণ খুব দূরেও নয়, কারণ সেই ক্ষণকে বেশি দূরে ঠেলার চেষ্টা করলে ধ্বংস পাকিস্তানের আরও নিকটবর্তী হবে। কিন্তু যে দিন পাকিস্তান সত্যিই খসিয়ে ফেলবে মুখোশটা, যে দিন সত্যিই শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বের সামনে হাজির হবেন ইসলামাবাদের কর্তারা, সে দিন পাকিস্তানকে আর কেউ বিশ্বাস করবেন কি? বিশ্বাস করে ঠকতে হয়েছে বারবার। যাকে পাকিস্তানে প্রকৃত মুখচ্ছবি বলে ভাবতে চাওয়া হয়েছে, বারবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে তা আসলে মুখোশ ছিল। মুখোশ সরিয়ে প্রকৃত মুখমণ্ডলেই এর পরে শান্তির জন্য আর্তি আনতে যদি বাধ্য হয় পাকিস্তান কোনওদিন, তাহলে সেই মুখটাকে আমরা মুখোশ বলে ভুল করব না তো? পালে সত্যি সত্যিই বাঘ পড়বে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE