Advertisement
E-Paper

পুরুষতন্ত্র ও তার দাঁত-নখ

রেজ্জাক মোল্লার যে মনোভাব প্রকাশ পেল, অন্য দলও তার থেকে মুক্ত নয়। লিখছেন শাশ্বতী ঘোষআবার রেজ্জাক মোল্লা বিস্ফোরক। এ বার বিজেপি প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। রেজ্জাক, যিনি নিজেকে সগর্বে ‘চাষার ব্যাটা’ বলতে এবং দলবদলের পরেও লাল গামছা গলায় জড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করতে ভালবাসেন, তাঁর সম্বন্ধে কিছু আর বলার নেই।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৬

আবার রেজ্জাক মোল্লা বিস্ফোরক। এ বার বিজেপি প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। রেজ্জাক, যিনি নিজেকে সগর্বে ‘চাষার ব্যাটা’ বলতে এবং দলবদলের পরেও লাল গামছা গলায় জড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করতে ভালবাসেন, তাঁর সম্বন্ধে কিছু আর বলার নেই। সমস্যা হয়েছে তাঁর চারপাশের যে মানুষরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে শরীর দুলিয়ে হেসে ওঠায়— দ্রৌপদী বলতেই তাঁদের মনশ্চক্ষে নিশ্চয়ই একাধিক পুরুষ একটি নারী শরীরের সংগত দখল পায়। সেই মানুষগুলিকে দেখে সভাপর্বের কৌরব আর তার সঙ্গীদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

একেই তো আমাদের দেশে অভিনেত্রীরা রাজনীতিতে প্রবেশ করলে, বিশেষত দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে প্রবেশ করলে (শাবানা বামপন্থী রাজনীতির ধারেকাছে বলে ওঁকে সহ্য করতে হয়নি) তাঁদের যে রঙ্গ-ব্যঙ্গ-তাচ্ছিল্যের সামনে পড়তে হয়, তার একাধিক নমুনা রয়েছে। রাজ্যসভায় অসমের জাতিদাঙ্গা নিয়ে আলোচনায় জয়া বচ্চন মন্তব্য করলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডের থেকে শুনতে হয়েছে, সেটা নাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফিল্মি ব্যাপার আদৌ নয় (২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২)। আবার তখন কংগ্রেসের সঞ্জয় নিরুপম স্মৃতি ইরানিকে (২০ ডিসেম্বর, ২০১২) বলেন, ‘চার দিন হুয়ে রাজনীতিমে আয়ে’, এসেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক হয়ে গেছ?

রাজনীতি এখনও যে হেতু ঘরের চৌহদ্দির বাইরে, অতএব সেটা পুরুষদেরই জায়গা, তাই মেয়েরা সেখানে কোন মূল্যে প্রবেশের অধিকার পেলেন, যুক্তি-বুদ্ধি-আবেগ-একাগ্রতা দিয়ে, না কি শাড়ির আঁচল ফেলে, সেটা আমজনতা সন্দেহের চোখে দেখে। বিশেষত দূরদূরান্তে যাওয়া, পুরুষ-পরিবৃত হয়ে থাকা, রাত করে ফেরা, বাড়িতে ঢোকা-বেরনোর বাঁধা-ধরা সময় না থাকা— এ সবই মেয়েদের জন্য ঠিক নয়। অতএব যে মেয়ে প্রবেশ করল, সে খুব সন্দেহজনক। এ সব ভাবনা এখনও জোরালো ভাবে ছড়িয়ে আছে।

দীর্ঘ দিন বামপন্থায় থেকেও রেজ্জাক মোল্লা তাঁর ইউএসপি রেখেছেন ‘চাষার ব্যাটা’— অর্থাৎ তথাকথিত সব নাগরিক কায়দাকানুনের তিনি বিরোধী। তাই রূপার অভিনয়, জীবনযাপন তাঁর কাছে আপত্তিকর ঠেকে। তাঁর এই আপত্তি আমাদের কাছে খুব আপত্তিকর ঠেকেছে, কারণ গণতন্ত্র শেখায় নিজের জীবন যাপনের অধিকার— অন্যকে কোনও ক্ষতি না করে। আজ রেজ্জাক সায়েব যদি ধূমপান বিরোধী মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধি হিসাবে সব মানুষকেই এ সব কথা বলতেন, তবু হয়তো মানা যেত। কিন্তু তিনি এবং তাঁর দলের অন্যান্যরা, রূপাকে নিয়ে বা তার আগে রানিকুঠির ঘটনায় ছাত্রীটিকে নিয়ে যে রকম নীতি-পুলিশগিরি করলেন, তা আমাদের চলতি রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েই ভয় ধরায়— তা কতটা সহনীয়তা শেখায় ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান জানানোর?

আজ এ রাজ্যের শাসক দলের প্রতিনিধি হয়ে রেজ্জাক মোল্লা যে মনোভাব প্রকাশ করলেন, রূপা যে দলে আছেন, সে দলও তো তার থেকে মুক্ত নয়। তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তিনি ২৯ অক্টোবর ২০১২ তারিখে এক জনসভায় বললেন, শশী তারুর ক্রিকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নাকি সুনন্দা পুষ্করের নামে রেখেছেন— ‘৫০ কোটির বান্ধবী, ভাবতে পারেন?’ আবার সেই দলের বাবুলাল গৌড় যখন বলেন যে জিন্স পরা, মদ খাওয়া, পুরুষের হাত ধরে নাচা পশ্চিমি সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতিতে ক্ষতিকর বা ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর দলের মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নাকভি নাগরিক ক্ষোভকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘লিপস্টিক-পাউডার মাখা মেয়েরা রাজনীতি আর গণতন্ত্রের মুন্ডুপাত করতে রাস্তায় নেমেছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীরাও তাই করছে’, তখন প্রশ্ন জাগে এঁরাও কি মেয়েদের রাজনীতিকে, প্রতিবাদকে আদৌ গুরুত্ব দেন? এই মন্তব্যগুলোর কোনওটাতে দল প্রতিবাদ করেছে বলে জানি না। দলনির্বিশেষে পুরুষপ্রাধান্য তার দাঁতনখ বার করে।

razzak molla comments of politicians Patriarchy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy