Advertisement
E-Paper

দাভোলকর ঐতিহ্য

দাভোলকর যখন খুন হন, তখন মহারাষ্ট্রে ‘কুসংস্কার বিরোধী ও ডাকিনীবিদ্যা আইন’ দীর্ঘ দিন স্থগিত হইয়াছিল। তিনি খুন হইবার চার দিনের ভিতর অর্ডিন্যান্স পাশ হইয়া যায়।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০০:০১
ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

১৯৮৯ সালে ‘মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’ গঠন করিয়াছিলেন চিকিৎসক নরেন্দ্র দাভোলকর। সমাজে অন্ধবিশ্বাসের প্রকোপ রুখিতে এবং কুসংস্কার নির্মূল করিয়া বিজ্ঞানমনস্কতা গড়িয়া তুলিতে কাজ করে সেই সংগঠন। পঁচিশ বৎসরে মহারাষ্ট্র জুড়িয়া ২২৫টি কেন্দ্র চালু করিয়াছিলেন দাভোলকর। ২০১৩ সালের ২০ অগস্ট অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি। তদন্ত এখনও চলিতেছে, যদিও অনুমান যে ডাকিনীবিদ্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করিবার কারণেই এই হত্যা। স্বস্তিদায়ক তথ্যটি আসিল সম্প্রতি। দাভোলকরের জীবৎকালে পঁচিশ বৎসর ধরিয়া যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হইয়াছিল, তাঁহার অনুপস্থিতিতে মাত্র ছয় বৎসরেই সমপরিমাণ কাজ হইয়াছে। পূর্বের পাঁচ হাজারের সহিত সমসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক তাঁহার সংগঠনে যোগ দিয়াছে এবং নূতন ১২৫টি কেন্দ্র চালু হইয়াছে। পুরাণের রক্তবীজের কথা মনে পড়িতে পারে। নদী স্রোতস্বিনী হইলেও সহস্র শৈবালদাম তাহাকে বাঁধিতে পারে না, প্রমাণ দাভোলকর। প্রতিবাদীরা বলেন, মানুষকে হত্যা করা যায়, চেতনার মৃত্যু হয় না, প্রমাণ দাভোলকর।

দাভোলকর যখন খুন হন, তখন মহারাষ্ট্রে ‘কুসংস্কার বিরোধী ও ডাকিনীবিদ্যা আইন’ দীর্ঘ দিন স্থগিত হইয়াছিল। তিনি খুন হইবার চার দিনের ভিতর অর্ডিন্যান্স পাশ হইয়া যায়। ইহার পর ‘জাত পঞ্চায়েত’-এর ক্ষমতা কাড়িয়া লইতে অপর একটি জরুরি বিল পাশ করাইতে সক্ষম হয় এই সংগঠন। এই যাবৎ কাল অসাংবিধানিক কিন্তু শক্তিশালী ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ ঐতিহ্যের দোহাই দিয়া বিবিধ কানুন পাশ করাইয়া লইত, উহা রদ হয়। বস্তুত, দাভোলকরের মৃত্যুর পর হইতে যুক্তিবাদী ব্যক্তিবর্গ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্রে আছে এই সংগঠন। বিশেষত, দাভোলকর কেন খুন হইলেন এবং তাঁহার সংগঠন কী কাজ করে, ইহা যুবসমাজের কৌতূহল। যে দক্ষিণপন্থীরা যুক্তিবাদকে হত্যা করিবার লক্ষ্যে যুক্তিবাদীর বুকে গুলি চালাইয়াছিল, তাহারা কেবল ব্যর্থ নহে, হিতে বিপরীত ঘটাইয়াছে। যুক্তি আজও অযুক্তিতে আঘাত করিতেছে, ‘ভূত’ হইয়াও। অশুভের নিকট এই ‘ভূত’ অসম শক্তিশালী।

ভূত হইতে বর্তমানে আসিলে বলিতে হয়, লোকসভা ভোটের সরগরম বাজারে বারংবার যে কয়টি নাম উঠিয়া আসিতেছে সেই স্থলে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ, রাজনীতিবিদ গোবিন্দ পানসারে, সাহিত্যিক এমএম কালবুর্গির সহিত একই পঙ্‌ক্তিতে রহিয়াছেন দাভোলকরও। ইঁহারা প্রত্যেকেই দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে লড়িতেছিলেন, এবং দেশে দক্ষিণপন্থীদের অতি-সক্রিয়তার কালেই খুন হইয়াছেন। কোনও খুনেরই পূর্ণাঙ্গ কিনারা এখনও অবধি হয় নাই। মামলা যে গতিতে চলিতেছে, তাহাতে নিকট ভবিষ্যতে সেই কিনারা হইবে বলিয়া ভরসাও নাই। ইতিমধ্যে নির্বাচনী রণাঙ্গনে দক্ষিণপন্থার মোকাবিলায় নামগুলি স্মরণ করাইয়া দেওয়া কর্তব্য, মনে করিতেছেন যুক্তিবাদীরা। আশার কথা, ভোটের রাজনীতি ছাপাইয়াও নামগুলি প্রবল ভাবে জাগিয়া আছে, উত্তরসূরিদের ভিতর দিয়া আপন কর্তব্য পালন করিতেছে। যত বার দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ব্যক্তিদের নাম স্মরণ করা হইবে, তত বার তাঁহাদের কাজের সূত্রে আমাদের দায়িত্বপালনের অঙ্গীকারটিও করিতে হইবে। ইহাই সত্যকার উত্তরাধিকার।

Superstition Narendra Dabholkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy