Advertisement
E-Paper

মানুষের শিক্ষামূলক সময় লকডাউন

এই দু মাসে সারা পৃথিবীতে দূষণ অনেক কমে গিয়েছে। লকডাউন মানুষকে বোঝালো যে আমরা কী করেছি আর এখন আমরা কী করতে পারি। লিখছেন শুভদীপ পালপরিবেশবিদদের দাবি,  লকডাউনের কারণে প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর আগের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। যেহেতু গত দুমাস ধরে অধিকাংশ বড় বড় দেশগুলিতে লকডাউন চলছে ফলে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, প্লাস্টিক দূষণ কমেছে।

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৪:০১
রাস্তা জীবাণুমুক্ত করতে চলছে স্যানিটাইজেশনের কাজ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

রাস্তা জীবাণুমুক্ত করতে চলছে স্যানিটাইজেশনের কাজ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। বিপাকে পড়েছেন অনেকে। কিন্তু লকডাউনের যদি কোনও সুফল দেখা যায় তাহলে সেই তালিকায় সব থেকে উপরে থাকবে পরিবেশের উন্নতি। পরিবেশ প্রেমীদের দাবি, এই দু মাসে সারা পৃথিবীতে দূষণ অনেক কমে গিয়েছে। তার নমুনা মিলেছে গঙ্গায়। লকডাউনের কারণে কমেছে গঙ্গায় দূষণ। পরিবেশবিদদের দাবি, ‘‘এই লকডাউন মানুষকে বুঝালো যে আমরা কী করেছি আর এখন আমরা কী করতে পারি।’’

পরিবেশবিদদের দাবি, লকডাউনের কারণে প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর আগের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। যেহেতু গত দুমাস ধরে অধিকাংশ বড় বড় দেশগুলিতে লকডাউন চলছে ফলে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, প্লাস্টিক দূষণ কমেছে। পরিবেশ প্রেমীদের দাবি, এই জেলায় সেই অর্থে কোনও কলকারখানা না থাকলেও পাথর শিল্পাঞ্চল এবং যানবাহন চলাচলের কারণে ব্যাপকভাবে দূষণ হতো। কিন্তু লকডাউনে সেই সব বন্ধ। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোয়নি। ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় যান চলাচল প্রায় ৯০ শতাংশ কম ছিল। স্বাভাবিকভাবেই কমেছে বায়ু দূষণ। এছাড়া পরিবেশ প্রেমীদের দাবি, অনেক মানুষের মধ্যে বেপরোয়াভাবে প্লাস্টিকজাত পদার্থ ব্যবহারের পর এদিকে ওদিকে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের ফলে অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্দি। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেকটা কমেছে। ফলে প্লাস্টিক দূষণও কমেছে। বিশ্বভারতীর পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক প্রতাপ কুমার পাড়ী বলেন, ‘‘পরিবেশ দূষণ অনেক কমেছে। এই করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউন থেকে মানুষকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’

পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব জুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরে কিন্তু বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে পরিবেশের। চলতি বছরের গোড়ার দিকে চিনে লকডাউন ঘোষণার পরেই দেখা গিয়েছিল কারখানার বর্জ্য কমার ফলে সে দেশের নদ, নদীগুলিতে দূষণের পরিমাণ অনেকটাই কমেছিল।

একই ভাবে ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষণার পরে সেই সব দেশগুলিতে কার্বন নিঃসরণ কমা ও প্রকৃতির নিজের ছন্দে ফেরার খবরও পরিবেশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। সেই তালিকার বাইরে নয় আমাদের ভারতও। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমার পাশাপাশি, কমেছে নদী দূষণের ঘটনাও। তারই সঙ্গে কিছুটা হলেও প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে এই নদীকেন্দ্রিক বাস্তুতন্ত্রে।

যেহেতু পৃথিবীর সমস্ত বড় দেশে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলেছে ফলে কলকারখানার পাশাপাশি বন্ধ ছিল যানচলাচল। ফলে বায়ু দূষণও কমেছে কয়েকগুন। সেই তালিকা থেকে ব্যতিত নয় এই জেলাও। তবে এই জেলায় কলকারখানার দূষন না থাকলেও নদীগুলি থেকে বেপরোয়াভাবে বালি তোলার ফলে নদীকেন্দ্রিক বাস্তুতন্ত্রও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। লকডাউনের কারণে এই নদী থেকে বালি তোলা প্রায় বন্ধ ছিল বলা চলে। ফলে নদীগুলি আগের অবস্থায় না ফিরলেও জীব বৈচিত্র কিছুটা হলেও আগের জায়গায় আসবে বলে আশা নদী বিশেষজ্ঞদের। বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আগে যখন বালি তোলা হত না তখন যে সমস্ত ক্ষুদ্র প্রাণীগুলিকে দেখা যেত সেইগুলিকে আবারও দেখা যাচ্ছে।’’

তবে কেবল নদীর ক্ষেত্রে নয়। লকডাউনের প্রভাবে যে পরিবেশ দূষণ কমেছে তার একাধিক নমুনা রয়েছে। যেমন, গত কয়েকদিনে শান্তিনিকেতনে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাখির ডাক। তাছাড়া শান্তিনিকেতনের বাগানগুলিতে দেখা মিলেছে বিভিন্ন ধরনের প্রজাপতির।

করোনা সংক্রমণের জন্য শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রবণতাও কয়েকগুন বেড়েছে। সিউড়ি শহরের বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাস ধরে সিউড়ি পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। এছাড়া দমকলের পক্ষ থেকে শহরের বড় বড় সরকারি ভবনগুলিকে নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে, নিয়মিত শহর পরিষ্কার করা হচ্ছে।

শহরবাসীর দাবি, এই দুমাসে শহরের রাস্তাঘাট, নর্দমা সবই অগের থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে। কেবল সিউড়ি শহর নয় জেলার অধিকাংশ এলাকার ক্ষেত্রেই চিত্রটি এক। তাছাড়া মানুষের নিয়মিত হাত ধোয়া থেকে শুরু করে নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে মানুষ আরও অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। লকডাউন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শান্তিনিকেতনের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের একটা অত্যন্ত শিক্ষামূলক সময় হল এই লকডাউন।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy