ফাইল চিত্র।
খুব গর্ব করেন দু’দল লোক।
একদল বলেন, তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ভারত গঠনের ইতিহাস হল তাঁদের দলের ইতিহাসের সমার্থক।
আর এক দল বলেন, তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। বলেন, জাতীয়তাবাদে, দেশপ্রেমে, আদর্শের প্রতি আনুগত্যে বর্তমান ভারতে তাঁদের জুড়ি একটিও নেই।
প্রথম দলটির নাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। দ্বিতীয় দলটি ভারতীয় জনতা পার্টি। নাম না বললেও হয়ত অনেকেই বুঝে নিতেন, কোন কোন দলের কথা বলা হচ্ছে। তবু ঝুঁকি নেওয়া গেল না। কারণ উপরোক্ত বিবরণ আর বাস্তব ছবির মধ্যে বিস্তর অমিল আজকাল ধরা পড়ে। তাই অনেকেই ধন্দে পড়তে পারতেন।
কংগ্রেস এবং বিজেপি ভারতের সবচেয়ে বড় দু’টি জাতীয় রাজনৈতিক দল। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ এবং পাল্টা কটাক্ষের লড়াইয়ে দুই দলই যে রকম কুরুচির পরিচয় দিল, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে মেলে না, ভারতীয়ত্বের সঙ্গে মেলে না, কোনও ইতিবাচক ঐতিহ্য বা পরম্পরার সঙ্গেও মেলে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের একটি ছবিতে কাল্পনিক সংলাপ বসিয়ে ‘রসিকতা’ করার চেষ্টা হল। আসলে কুরুচির পরিচয়পত্রে পর্যবসিত হল ছবিটি। কংগ্রেসের যুব সংগঠনের টুইটার হ্যান্ডলে সেই ছবি তুলে ধরা হল।
আরও পড়ুন: মোদীকে নিয়ে কুরুচিকর টুইট মুছে দিল কংগ্রেস
এই টুইট বিতর্কের ঝড় তুলে দিল। বিজেপি তীব্র নিন্দা করল এই কুরুচিকর আক্রমণের। ঝড়ের মুখে পড়ে ডিলিট করা হল টুইট। কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফেও জানানো হল, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ ধরনের কুরুচিকর ব্যঙ্গ কংগ্রেস অনুমোদন করে না।
এখানেই থামতে পারত বিতর্ক। কিন্তু থামল না। মোদীকে নিয়ে যে রকম কুরুচিকর ইঙ্গিত করা হয়েছিল, নাম না করে ঠিক তেমনই ইঙ্গিতে সনিয়া গাঁধীকে খোঁচা দিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা তথা বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়াল। পরে সেই টুইট তিনিও ডিলিট করলেন, ক্ষমাও চেয়ে নিলেন। অনেকটা যেন বদলা নেওয়ার ভঙ্গি। বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর অবমাননা করেছে, তার পর ক্ষমা চেয়েছে। সুতরাং শাসক দলের সাংসদও বিরোধী দলের সভানেত্রীর অবমাননাটা সেরে নিলেন, তার পর আবার ক্ষমা চাইলেন।
এ গোটা পর্বের মধ্যে কুরুচি যে রয়েছে, সে তো আগেই বলেছি। কিন্তু কুরুচির পাশাপাশি এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অপরিপক্কতা, রয়েছে অপরিসীম সঙ্কীর্ণতা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল— তাদের লড়াই এই পর্যায়ে নামবে! বিন্দুমাত্র সম্ভ্রম, সমীহের ছাপ থাকবে না! উদারতা, রাজনৈতিক সৌজন্য, দায়িত্বশীলতা ইত্যাদিই আশা করা যায় যে কোনও রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে। কিন্তু শীর্ষ স্তরেই সে সবের অভাব ধরা পড়তে শুরু করল। নীচের স্তরে ছবিটা আরও কত খারাপ হতে পারে, সে ভেবে আতঙ্কিত হতে হচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy