Advertisement
E-Paper

নূতনের দাবি

এই সুচিন্তার পরম্পরায় সহসা বেসুর বাজাইল একটি টুইট-বার্তা, যে বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি পদে সদ্য অধিষ্ঠিত রাহুল গাঁধী একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অশোভন সংকেত তথা মন্তব্য ছুড়িয়া বসিলেন।

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৯

মর্যাদা অর্জন করা কঠিন, ধরিয়া রাখা আরও কঠিন। রাহুল গাঁধী কি তাহা বুঝিতেছেন? বুঝিলে তবু ভরসা আছে, নচেৎ— বছর না ফুরাইতেই আশার প্রদীপখানি নিবিয়াছে। আশা জাগাইয়াছিলেন রাহুল নিজেই। ভারতীয় রাজনীতির কুকথা-লাঞ্ছিত পরিসরে তিনি একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করিতে তৎপর হইয়াছিলেন। গুজরাত নির্বাচনের প্রচারপর্বে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা ক্রমাগত গালিগালাজের প্লাবন বহাইয়া দিয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ঘৃণার আগুনে প্রবল উদ্যমে ইন্ধন দিয়াছেন, কিন্তু বহু প্ররোচনাতেও কংগ্রেসের তৎকালীন সহ-সভাপতি এবং মুখ্য প্রচারক মুখ ফসকান নাই, রাজনৈতিক বিরোধিতাকে অশোভন ব্যক্তিগত আক্রমণে নামাইয়া আনেন নাই। দলের কোনও কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতা বা বক্তা শালীনতার গণ্ডি অতিক্রম করিলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় তিরস্কার করিয়াছেন, শাস্তি অবধি দিয়াছেন। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের মনে, হয়তো বা নরেন্দ্র মোদীর গুণমুগ্ধদের একাংশের মনের গভীরেও, কংগ্রেসের নায়কের প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা জাগিয়াছে। সংযম তাঁহাকে মর্যাদা দিয়াছে, যে মর্যাদা, সংযমের মতোই, সমকালীন ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল।

এই সুচিন্তার পরম্পরায় সহসা বেসুর বাজাইল একটি টুইট-বার্তা, যে বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি পদে সদ্য অধিষ্ঠিত রাহুল গাঁধী একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অশোভন সংকেত তথা মন্তব্য ছুড়িয়া বসিলেন। এবং তাহাও এমন এক সময়ে, যখন দুই শিবিরের সওয়াল-জবাব অভদ্রতা হইতে ভদ্রতার পথে যাত্রা শুরু করিয়াছিল। রাজ্যসভায় বিজেপির অধিনায়ক অরুণ জেটলি বলিয়াছিলেন, মনমোহন সিংহের প্রতি তাঁহাদের প্রভূত শ্রদ্ধা আছে, দেশের প্রতি তাঁহার দায়বদ্ধতা বিষয়ে তাঁহাদের কোনও প্রশ্ন নাই। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের অধিনায়ক গুলাম নবি আজাদও জানাইয়াছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁহারা সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। দুই তরফেই একটি স্বীকৃতি অনুক্ত, কিন্তু স্পষ্ট ছিল: ভোটের ময়দান হইতে সংসদীয় রাজনীতিকে স্বতন্ত্র রাখিতে হইবে।

এবং সেই কারণেই এই সংসদীয় সৌজন্যবিনিময়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমাজ-মাধ্যমে কংগ্রেস সভাপতির কটুবার্তাটি দুর্ভাগ্যজনক। সত্য, রাজনীতিতে এই ধরনের কটুকথা চলিয়া থাকে, তীব্র ব্যঙ্গের প্রকাশ হিসাবে তাহারও নাম বিকৃত করিয়া অপবাদ দিবার দৃষ্টান্তও সুপরিচিত এবং সুপ্রাচীন। সুভাষচন্দ্র হইতে অতুল্য ঘোষ অবধি বিভিন্ন নেতা সম্পর্কে এই বঙ্গের বামপন্থীদের বিবিধ কটূক্তি কুখ্যাত হইয়া আছে ও থাকিবে। কিন্তু রাহুল গাঁধী তো এই ঐতিহ্য বহন করিবার কথা বলেন নাই, ইহার বিপরীতে একটি সুসভ্য রাজনীতির যে প্রবাহ এই দেশে চলিয়া আসিতেছে এবং এখনও সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হয় নাই, তাহাকেই নূতন প্রাণ দিবার আহ্বান জানাইয়াছেন। ব্যঙ্গচ্ছলে হইলেও কটুকথা বলিবার লোভ সামলানো তাঁহার প্রাথমিক কর্তব্য। এবং ভারতীয় রাজনীতির ভাষা যে অতলে নামিয়াছে, তাহা হইতে সেই ভাষাকে উদ্ধার করিতে চাহিলে স্বাভাবিক সংযম যথেষ্ট নহে, এখন প্রয়োজন অস্বাভাবিক সংযমের। রাহুল গাঁধী কি তাহা বুঝিবেন? মানুষের উপর, এমনকী রাজনীতির মানুষের উপরেও, বিশ্বাস হারানো পাপ। বিশেষত নূতন বছরের সূচনায়।

Politics restraint
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy